প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, শিশুকে যদি ভাষায় ও গণিতে সক্ষম করে তুলতে পারি, সাক্ষর করে তুলতে পারি, তাহলে সে মানবিক জ্ঞানভান্ডারে ঢুকতে পারবে। স্বাধীনভাবে জ্ঞান আহরণ করতে পারবে। শিশুকে সাক্ষর ও সক্ষম করে তুলতে পারলে তার সামাজিক অবস্থান পরিবর্তনের সুযোগ করে দিতে পারব। শিশুকে সাক্ষর করে তোলা মানে সামাজিক বৈষম্য নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা হলো। সামাজিক বৈষম্য নিরসনে প্রাথমিক সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের টার্গেট হচ্ছে আমাদের শিশুদের সাক্ষর করে তোলা ও সক্ষম করে তোলা। সেটার জন্য শিক্ষকদের (আপনাদের) প্রয়োজন। আপনাদেরও সমস্যাগুলো দেখার দায়িত্ব রয়েছে আমাদের। আমরা সিনসিয়ারলি চেষ্টা করছি । এই বিষয়গুলো দেখার চেষ্টা করছি। সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করব। আপনাদের সমস্যার সমাধানের জন্য আপনাদের একটু ভূমিকা রয়ে গেছে-সেটি হল যদি আপনারা নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এই পারসেপশন নিয়ে আসতে পারেন যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা ভালো হচ্ছে তখন কিন্তু তারা আপনাদের দাবিগুলোর প্রতি সহজে সাড়া দিবে। আর যদি পারসেপশন থাকে পড়াশোনা ভালো হচ্ছে না, তাহলে তারা শুনেও শুনবেনা। এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি অর্থমূল্যে বিবেচনা করেন, আপনার পেশা অনেক সময় বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আকর্ষণীয় নয়। আপনি যদি বিবেচনা করেন আমি একটা জীবন যাপন করছি। এটাই আমার জীবন। মানুষের জীবনতো একটাই। আপনি জীবন শেষে কি সান্তনা নিয়ে যাবেন। নিশ্চিতভাবে আপনার মনে জাগবে আপনি কি করেছেন? আপনার কাজটি এমন যেটার জন্য যে কোন মানুষই মনে সান্তনা নিতে পারে যে, আমি এতগুলো মানুষকে সক্ষম করে তুলেছি। এবং সত্যি কথা বলতে কি একটি মানুষের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে অন্য একটি মানুষের ব্যক্তিত্বকে অবয়ব করে। আপনি নিজে কল্পনা করতে পারেন- এই যে আপনি বড় হয়ে উঠলেন কার কার প্রভাব আপনার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে পড়েছে এবং তাদেরকে আপনি কখনোই ভুলতে পারেন না। এবং আপনার মধ্যে তারা জীবিত থাকেন তারা মরে গেলে পরেও। ফলে শিক্ষকদের এমন একটি সুযোগ রয়ে গেছে আপনার একটি শিশুকে ব্যক্তিত্বের মধ্যে অন্তর্গত হয়ে যেতে পারেন। তার মধ্যে আপনারা জীবিত থাকতে পারেন আপনার মৃত্যুর পরেও। আমাদের মূল উদ্দেশ্য আমাদের শিশুদের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। সংক্ষেপে ভাষায় ও গণিতে সাক্ষর করে তোলা। যে যে অবস্থানে রয়েছি, আমাদের কর্তব্য ঠিকভাবে করা, আমাদের কাজটা সুসম্পন্ন করতে পারা।
উপদেষ্টা আজ সকালে মাগুরা জেলা অডিটরিয়ামে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস আয়োজিত প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে মাগুরা জেলার বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ অহিদুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পিইডিপি-৪) মোঃ আতিকুর রহমান, মাগুরা সরকারি মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রশিদ, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর অপূর্ব মন্ডল, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুর রহমান, প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন, জিল্লুর রহমান, শাহনাজ পারভিন, মোঃ গাওয়ারিত হোসেন ও ইয়াসমিন আক্তার।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ হামিদুল হক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ( প্রাক-প্রাথমিক ও একীভূত শিক্ষা) মোঃ জয়নাল আবেদীন, মাগুরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আমিরুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মাগুরা জেলায় ৫০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
উপদেষ্টা পরে মাগুরা পিটিআই অডিটরিয়ামে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস আয়োজিত সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের ‘ট্রেনিং অন প্রকিউরমেন্ট ই-জিপি’র সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।