• ১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২২শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপের দাবি

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত মে ১৩, ২০২৫
আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপের দাবি

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও কার্যকর কর আরোপের দাবি জানিয়েছেন গবেষক, চিকিৎসক, গণমাধ্যমকর্মীসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা।
সকালে (১৩ মে ২০২৫) জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা আহছানিয়া মিশন আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও কার্যকর কর আরোপের দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন এমন দাবি জানান তারা।
এছাড়াও সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি ১০ শলাকার সিগারেটের প্যাকেটের সর্বনিম্ন খূচরা মূল্য ৯০ টাকা করার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরের দাম কাছাকাছি হওয়ায় দাম বাড়লেও মধ্যম থেকে নিম্নস্তরের সিগারেট সেবনের প্রবনতা বাড়ে, তবে দুই স্তরকে একত্রিত করে দাম বাড়ালে সেই সেবনের প্রবনতা কমবে। পাশাপাশি তরুণেরা সিগারেট সেবনে নিরুৎসাহিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লক্ষ তরুণের তামাকজনিত অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য খাত সংষ্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন এবং আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল ও একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা এবং ইয়ুথ ফোরাম সদস্য এএফএম সাদমান সাকিব।
এ সময় মূলপ্রবেন্ধ ঢাকা আহছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী শরিফুল ইসলাম জানান, সুপারিশ অনুযায়ী আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তামাকপণ্যের বিদ্যমান কর ব্যবস্থা সংস্কার করলে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.১% থেকে হ্রাস পেয়ে ১৩.০৩% হবে। প্রায় ২৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে এবং প্রায় ১৭ লক্ষ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। দীর্ঘমেয়াদে ৮ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭৫৮ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৮ লক্ষ ৬৯ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠির অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে অর্থাৎ ২০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় হবে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি।
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ২০ লক্ষেরও বেশি ক্যান্সার রোগী আছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ ক্যান্সারের জন্য সরাসরি দায়ী হলো তামাক। তামাকসহ সকল স্বাস্থ্য ক্ষতিকর পণ্যের জন্য সিন ট্যাক্স (sin tax) প্রচলন ও তা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যয় করার প্রস্তাবনা কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন আশু সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। তামাক হ্রাসে যা যা করণীয় তার সবই সরকারের উচিত বলে মনে করেন তিনি।
কর প্রস্তাবনার সাথে একমত পোষন করে সুশান্ত সিনহা বলেন, কর বাড়িয়ে তামাক পণ্যের মূল্য বাড়ালে সরকারের রাজস্ব বাড়বে, অন্যদিকে কোম্পানির লভ্যাংশ কমবে। কেননা করের টাকা পুরোটাই সরকারের কোষাগারে জমা হবে। কর বৃদ্ধি পেলে চোরাচালান বাড়বে মর্মে তামাক কোম্পানির মিথ্যাচারের বিরোধিতা করে বলেন বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সিগারেট সবচেয়ে সস্তা।
শাফিউন নাহিন শিমুল জানান, সিগারেট বা তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের চেয়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার। তামাকপণ্য বিক্রি থেকে যে রাজস্ব আসে, তা তামাকজনিত স্বাস্থ্য ব্যয়ের মাত্র ৭৫ শতাংশ। এমনকি, কার্যকর করারোপের মাধ্যমে সিগারেট বিক্রি থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ১১ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
এছাড়াও প্রস্তাবিত তামাক কর সংস্কার একটি সুস্থ জাতি গঠনে অবদান রাখবে। পাশাপাশি দেশের স্বাস্থ্যখাত ও উন্নয়ন অগ্রাধিকারসমূহে অর্থায়ন এবং টেকসই কর ব্যবস্থার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অতিরিক্ত অর্থের যোগান দিতে সক্ষম হবে বলেও জানান বক্তারা।

June 2025
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930