• ২৪শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৪শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

কাশ্মীর সংকটে বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত আগস্ট ৯, ২০১৯
কাশ্মীর সংকটে বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ

ভারতের রাজ্যসভার অধিবেশনে সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রস্তাব দেন। পরে রাষ্ট্রপতি ক্ষমতাসীন দলের এ প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এর মধ্য দিয়ে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের ৭০ বছরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে দিল নরেন্দ্র মোদির সরকার। সংবিধানের এই ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে দুই ভাগ করা হলো।

৩৭০ ধারার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতেন জম্মু-কাশ্মীরের মুসলমানরা। নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা ও স্বতন্ত্র আইন বানানোর অধিকার ছিল ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের। তবে ৩৭০ ধারা বাতিলের ফলে এখন থেকে জম্মু-কাশ্মীরের পরিচিতি হবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে।

ভারত সরকারের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না কাশ্মীরিরা।

কাশ্মীর সংকট কয়েক দশকের পুরনো। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই কাশ্মীর সমস্যা শুরু হয়।

প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত-পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরকে দখল করতে চেয়েছিল। কাশ্মীরের একটি অংশের দখল নেয় পাকিস্তান। আরেকটি অংশ তথা কাশ্মীর ও জম্মুর দখল নেয় ভারত। পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীরের যে অংশ যুক্ত রয়েছে, সেটি আজাদ কাশ্মীর হিসেবে পরিচিত। এ দুই কাশ্মীরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকট জম্মু-কাশ্মীর ঘিরেই।

কাশ্মীর সংকট সমাধানে যুগে যুগে বহু মনীষী ও রাষ্ট্রনায়ক নিজের চিন্তা ও পরামর্শ দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও কাশ্মীর সংকট সমাধানে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর জীবনীগ্রন্থ ‘কারাগারের রোজনামচা’য় বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

কাশ্মীর নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘অত্যাচার আর গুলি করতে কেহ কাহারো চেয়ে কম পারদর্শী নয়। গুলি করে বা গ্রেফতার করে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। ভারতের উচিত ছিল গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার মেনে নিয়ে দুদেশের মধ্যে একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তি করে নেয়া।’

এই সংকটের সমাধানে বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ ছিল, ‘পাকিস্তান ও ভারত সামরিক খাতে অর্থ ব্যয় না করে দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য অর্থ ব্যয় করতে পারত। দুদেশের জনগণও উপকৃত হত। ভারত যখন গণতন্ত্রের পূজারি বলে নিজকে মনে করে তখন কাশ্মীরের জনগণের মতামত নিতে কেন আপত্তি করছে? এতে একদিন দুটি দেশই এক ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হতে বাধ্য হবে।’

জম্মু-কাশ্মীরের জনমতকে উপেক্ষা করায় ভারতের সমালোচনা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আরও বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ভারত, গণতন্ত্রের পথে যেতে রাজি হয় না কেন? কারণ তারা জানে গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনগণের মতামত নিলে ভারতের পক্ষে কাশ্মীরের লোক ভোট দেবে না। তাই জুলুম করেই দখল রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুদেশের সরকার কাশ্মীরের একটি শান্তিপূর্ণ ফয়সালা না করে দুই দেশের জনগণের ক্ষতিই করছেন। দুদেশের মধ্যে শান্তি কায়েম হলে, সামরিক বিভাগে বেশি টাকা খরচ না করে দেশের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা যেত। তাতে দুই দেশের জনগণই উপকৃত হতো। আমার মনে হয়, ভারতের একগুঁয়েমিই দায়ী শান্তি না হওয়ার জন্য।’

তথ্যসূত্র: কারাগারের রোজনামচা।

সৌজন্যেঃ যুগান্তর

March 2025
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031