বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের ৫ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও ৬ষ্ঠ বর্ষে পদার্পন উপলক্ষে “ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত শীর্ষক আলোচনা সভা” এর আয়োজন করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় গণঅধিকার পরিষদের সম্মানিত সভাপতি এবং প্রবাসী অধিকার পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা জনাব নূরুল হক নূর বলেন— “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লবের পর গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লবের অংশীজনদের নিয়ে সরকার গঠন করা হয়। কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগী, বিদেশী মদদপুষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সরকার গঠন করা হয়েছে। ছাত্রদের ৩ জন প্রতিনিধি রাখা হয়েছিলো। তারা ৩ জন কেন গেলো? অথচ উচিত তো ছিল গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে সরকার গঠন করা। ৫ই আগষ্টের পূর্বে সবার মাঝে ঐক্য ছিলো, কিন্তু এখন সেই ঐক্য নাই। গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির মাঝে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। যারা গণঅভ্যুত্থানের এই ঐক্য বিনষ্ট করেছে তাদেরও একদিন বিচার হবে। দেশের এই পরিস্থিতিতে দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে এই অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার কে জাতীয় সরকারে রূপদানের মাধ্যমে জাতিকে পথ দেখাতে হবে। তা না হলে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশংকা রয়েছে। একদিকে তারা আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ, বিপ্লবীরা মার খাচ্ছে এসব বলছে অন্য দিকে তারা আওয়ামিলীগ কে পুনর্বাসন করছে। আওয়ামিলীগের অর্থের যোগানদাতা বসুন্ধরা, ওরিয়ন, রূপায়ন গ্রুপের মাফিয়া দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধ কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বরং বিপ্লবীরা রূপায়নের মাফিয়া মুকুলের বিল্ডিং উঠেছে। অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী মাফিয়া ,লুটেরাদের রক্ষা করা হচ্ছে। সাবের হোসেন চৌধুরীসহ আওয়ামীলীগের নেতাদের জামিন ও আব্দুল হামিদের পালিয়ে যাওয়া সরকারের ইশারাতেই হয়েছে।
গত বছর আওয়ামী দুর্বৃত্তরা মানুষকে জিম্মি করে শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট করেছিলো। ৫ই আগষ্টের পরও এখন নতুন করে নতুন সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে। এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। আমরা শুনেছি এই শ্রম বাজার সিন্ডিকেটের সাথে নাকি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া অনেকেই জড়িত রয়েছে। শ্রম বাজারের এই সিন্ডিকেট ভাংগতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের ব্যয় ১ লক্ষ টাকার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। প্রবাসে মারা গেলে সরকারি খরচে অসহায় প্রবাসীর লাশ দেশে আনতে হবে। এক কোটির বেশি প্রবাসী রয়েছে, তারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, আওয়ামিলীগের পতনের পিছনেও প্রবাসীদের ভূমিকা রয়েছে। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত ও ১০% সংরক্ষিত আসন দিতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। প্রবাসীরা আমাদের অমূল্য সম্পদ। তাদেরকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে। প্রবাসীরা রেমিট্যান্স শাটডাউন না করলে হাসিনার পত হতো না। তাদের কারণেই গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করছি, ডামি রাষ্ট্রপতি, ডামি মন্ত্রীরা সরকারের সহযোগিতায় দেশ ছাড়ছে। সরকার গণহত্যা বিচার ও আ.লীগকে নিষিদ্ধ না করে তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের চেতনার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। এটা শহীদের রক্তের সাথে বেইমানি। অবশ্যই আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার পিছনে যারা দায়ী তাদের বিচার করতে হবে। অন্যথায় সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী দালালদের পদত্যাগের দাবিতে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলবো।
গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ও উচ্চতর পরিষদের সদস্য ফারুক হাসান বলেন, প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে দেশ চলে তাদের ন্যায্য পাওনা দিতে সমস্যা কোথায়। প্রবাসীদের ভোটাধিকার সহ যৌক্তিক ১০ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক।
অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো: কবীর হোসেন। তিনি বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের যৌক্তিক ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন:
প্রবাসীদের যৌক্তিক ১০ দফা দাবি:
১/ অনিয়মিত, আনডকুমেন্টেড, দুস্থ এবং অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীর মরদেহ পরিবহন ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২২ এর দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।
২/ প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র চাই ও বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালট/প্রক্সি ভোটে নয় বাংলাদেশী দূতাবাস ও নির্বাচনী বুথে ব্যালট বাক্সে স্ব-শরীরে অথবা অনলাইনে প্রবাসীরা নিজের ভোট নিজে দিতে চাই এবং জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের জন্য ১০% সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ চাই।
৩/ বিমানবন্দরে প্রবাসী হয়রানি বন্ধ, যথাযথ সম্মান ও বাংলাদেশ বিমানসহ বেসরকারি অন্যান্য বিমানের সিন্ডিকেটমুক্ত সুলভ মূল্যে বিমান টিকিট চাই।
৪/ প্রবাসীদের জন্য যুগপোযোগী দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন প্রনোয়ন ও পেনশন সুবিধা চাই।
৫/ সহজ প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট সংশোধনের সুযোগসহ দালাল ও হয়রানি মুক্ত পাসপোর্ট ও দূতাবাস সেবা চাই।
৬/ প্রবাসী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং প্রবাসী ও প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদের সুচিকিৎসার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা ও বিশেষায়িত হাসপাতাল চাই।
৭/ জাতীয় বাজেটে প্রবাসীদের জন্য প্রতিবছর (৫%) বিশেষ বরাদ্দ চাই।
৮/ বিদেশে কাগজপত্র বিহীন প্রবাসীদের বৈধকরণে সরকারের সহযোগিতা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সব দেশের ভিসা ঢাকা থেকেই পাওয়ার ব্যবস্থা চাই।
৯/ বাংলাদেশী কর্মী যেসকল দেশে আছে সেসকল দেশে পর্যাপ্ত প্রবাস বান্ধব বাংলাদেশী দূতাবাস/হাইকমিশন ও শ্রম কল্যাণ উইং চাই।
১০/ অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ, জি টু জি এর মাধ্যমে প্রবাসে কর্মী প্রেরণ ও প্রবাস ফেরতদের কর্মসংস্থান, সুদমুক্ত পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা চাই।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, এরশাদ সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান রিজু, মাহফুজুর রহমান, মাহবুবুর রহমান জনি, বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের মনজুর মোর্শেদ মামুন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক, আল ইমরান, পেশাজীবি অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক জাফর আহমেদ, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মায়া ও গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগরের নেতৃবৃন্দ।
প্রোগ্রাম সঞ্চালনায় ছিলেন শাহাব উদ্দিন শিহাব, মানব পাচার প্রতিরোধ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ ও সভাপতিত্বে ছিলেন নেয়ামত উল্যা, সহ সভাপতি বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ আসিফ আহমেদ জনি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, মোঃ জুয়েল মুন্সী, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, আবুল মনসুর সাজু চৌধুরী, দূর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, সম্রাট আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, ব্রুনাই শাখা, আতিক হাসান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক, লিবিয়া শাখা ,ফরহাদ গাজী, সাধারণ সম্পাদক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মোঃ জনি সদস্য, কুয়েত শাখা, সফিকুল ইসলাম জয়, সদস্য, মালয়েশিয়া শাখা ও আরো অনেকে।