বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এক কর্মশালায় বলেছেন- সরকারি লেনদেন ‘ক্যাশলেস’ করার উদ্যোগ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট এর সঠিকতা যাচাই এর জন্য অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম (এভিএস) চালু করেছে। নতুন এই ব্যবস্থা সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে এবং একই সঙ্গে জালিয়াতি রোধ ও অর্থ অপচয় রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীগণ মত প্রদান করেছেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে চারটি চিফ একাউন্টস এন্ড ফাইন্যান্স অফিস (সিএএফও) এ পরীক্ষামূলকভাবে এভিএস সিস্টেম চালু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। জুন ২০২৫-এর মধ্যে দেশের প্রতিটি হিসাবরক্ষণ অফিসে এভিএস সিস্টেম বাস্তবায়ন করা হবে মর্মে কর্মশালায় জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমসমূহের সাথে আইবাস++ সিস্টেমের ইন্ট্রিগেশন স্থাপন, গ্রাহকদের একাউন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম পাইলটিং পরবর্তী সকল পর্যায়ে বাস্তবায়ন রূপরেখা প্রণয়ন বিষয়ক কর্মশালা আজ সকালে মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়। আইবাস++ স্কিম, স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল প্রোগ্রাম টু এনাবেল সার্ভিস ডেলিভারি (এসপিএফএমএস), অর্থ বিভাগ, কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মোঃ হাবিবুর রহমান, ডেপুটি গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক। বিলকিস জাহান রিমি, অতিরিক্ত সচিব, বাজেট-১ ও জাতীয় কর্মসূচি পরিচালক, এসপিএফএমএস কর্মসূচির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মোঃ জাকির হোসেন চৌধুরী, ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও মোঃ: হানিফ মিয়া, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমসমূহের সাথে আইবাস++ সিস্টেমের ইন্ট্রিগেশন স্থাপন, গ্রাহকদের একাউন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম পাইলটিং পরবর্তী সকল পর্যায়ে বাস্তবায়ন রূপরেখা প্রণয়ন বিষয়ে উপস্থাপনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংক আইসিটি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায় এবং আইবাস++ সিস্টেমের উপর উপস্থাপনা করেন অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব আবুল বাসার মুহাম্মদ আমীর উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাকের ৯০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করে তাদের মতামত প্রদান করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মোঃ: হাবিবুর রহমান বলেন, এভিএস চালুর ফলে সরকারি লেনদেন আরও সহজ ও সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে। এর মাধ্যমে সরকারি অর্থ সঠিক প্রাপকের হিসাবে পৌঁছানো নিশ্চিত হবে এবং গ্রাহকদের ভোগান্তি কমবে। এছাড়া, সরকারি ব্যাংক হিসাবের তথ্য যাচাই করা সম্ভব হবে, যা অর্থ ব্যবস্থাপনার নিরাপত্তা বাড়াবে।
বিলকিস জাহান তাঁর বক্তব্যে বলেন, এভিএস সিস্টেম বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারি সকল পেমেন্ট ক্যাশলেস করা, ব্যয় ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, জালিয়াতি ও অর্থের অপচয় রোধ করা, গ্রাহকদের ভোগান্তি লাঘব করা, সঠিক প্রাপকের ব্যাংক হিসাবে অর্থ প্রেরণ নিশ্চিত করা। তিনি বলেন এই সিস্টেম সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য যাচাই করা এবং চেক ছাপানোর জন্য সরকারের ব্যয়িত ৫০০-৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে ভূমিকা রাখবে ।
কর্মশালার উপস্থাপনায় বলা হয়, তথ্য যাচাই প্রক্রিয়াটি আইবাস++ সিস্টেমের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব যাচাই নিশ্চিত করা হবে। এরপর ড্রইং এন্ড ডিসবার্সমেন্ট অফিসারগণ বিল এন্ট্রি, অনুমোদন, ইএফটি জেনারেশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরণের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, ভবিষ্যতে ইএফটি রিটার্ন কার্যক্রম সম্পূর্ণ অটোমেটেড করার সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থবছর সমাপ্তির সময় নতুন ব্যাংক হিসাব এন্ট্রির সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনও অনিয়ম বা জটিলতা না থাকে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর উপকারভোগীদের মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে রিয়েল টাইমে অর্থ প্রদান নিশ্চিত করার ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।