• ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ৩০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

তুলসী গ্যবার্ডই হচ্ছেন মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫
তুলসী গ্যবার্ডই হচ্ছেন মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তুলসী গ্যবার্ডকেই মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে সিনেট। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে তুলসীর নাম মনোনয়ন দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প নিজেই। তার এই মনোনয়ন নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা হলেও অবশেষে তুলসি গ্যবার্ডকেই জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

এতে বলা হয়, ৫২-৪৮ ভোটে সাবেক ওই ডেমোক্রেট কাংগ্রেসওম্যানকে মনোনীত করেছে সিনেট। যদিও সাবেক সিনেট মেম্বারদের অনেকেই তার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রিপাবলিকান এক সিনেটরও ডেমোক্রেটদের সঙ্গে যোগ দেন। তিনি হলেন মিচ ম্যাককনেল। তিনি একজন রিপাবলিকান হয়েও তুলসীকে মার্কিন গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত নন।

মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর তুলসী ইতিমধ্যেই শপথ নিয়েছেন। সিআইএ, এফবিআই এবং এনএসএ সহ যুক্তরাষ্ট্রের মোট ১৮টি গোয়েন্দা সংস্থার দেখভাল করবেন তিনি।

বিবিসি বলছে, তুলসির মনোনয়ন প্রক্রিয়া ছিল বেশ কঠিন। কেননা তার বুদ্ধিমত্তার কারণে সিনেটে বেশ কয়েকবারই ভোট হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে রিপাবলিকানরা। তবে তুলসির মনোনয়ন ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার জন্য আরেকটি বিজয় চিহ্ন হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ট্রাম্প নিজেই তুলসিকে গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ এবং সরকারি নথি ফাঁসকারী এডওয়ার্ড স্নোডেনের প্রতি সমর্থনের ফলে তুলসি এই পদের জন্য বেশ অপছন্দের ছিলেন। এছাড়া ২০১৭ সালে সিরিয়া সফর করেন গ্যবার্ড। সেসময় তিনি বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সঙ্গে দেখা করেন। আসাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ থাকায় ওই সফর নিয়েও বেশ নিন্দার মুখে পড়েন তুলসী।

এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেছেন, তুলসী গ্যাবার্ড একজন অভিজ্ঞ এবং এক সময়ের ডেমোক্রেটিক হোয়াইট হাউসের প্রতিযোগী। আমাদের গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের কাছে তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন সাহস যোগাবে।

গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক হিসেবে মনোনীত করার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তুলসী। তিনি বলেছেন, মার্কিন জনগণের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আপনার মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে কাজ করার সুযোগের জন্য ধন্যবাদ। আমি কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছি।

তুলসি নাম দেখে অনেকে তাকে ‘ভারতীয় বংশোদ্ভূত’ বলে ভুল করেন। বংশগত দিক থেকে ভারতের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। যা তিনি নানা ফোরামে স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন।

বাবা মাইক গ্যাবার্ড ও মা ক্যারল গ্যাবার্ডের পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ তুলসি গ্যাবার্ড ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বয়স যখন দুই বছর, তখন তার পরিবার হাওয়াইতে চলে যায়। সেখানেই বড় হন তুলসী।

তুলসি মিশ্র সংস্কৃতির পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। তার বাবা মাইক গ্যাবার্ড সামোয়ান ও ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত। আর মা ক্যারলের জন্ম ও বেড়ে ওঠা যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা ও মিশিগান রাজ্যে। ক্যারল প্রথম জীবনে হিন্দু ধর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং সেখান থেকেই নিজের সন্তানদের হিন্দু নাম রাখেন।

হাইস্কুল পর্যন্ত পড়াশোনা বাড়িতেই করেছেন তুলসি। তবে এর মধ্যে ফিলিপিন্সে একটি বালিকা বোর্ডিং স্কুলে দুই বছরের জন্য পড়াশোনা করেছিলেন। ওই সময় পড়াশুনার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠনে কাজ করেন তিনি।

বাবা মাইক গ্যাবার্ড হাওয়াই স্টেট সিনেটর ছিলেন। বাবার প্রভাবেই রাজনীতিতে যোগ দেন তুলসি এবং ২০০২ সালে হাওয়াই হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য লিওয়ার্ড কমিউনিটি কলেজ ছাড়েন, যেখানে তিনি টেলিভিশন প্রোডাকশন বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। এবং প্রথামবারেই হাওয়াই হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে সর্বকনিষ্ঠ নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হন।

হাওয়াই আইনসভায় দায়িত্ব পালনকালে ২০০৩ সালে হাওয়াই আর্মি ন্যাশনাল গার্ডে যোগ দেন তুলসি। প্রশিক্ষণ শেষে তাকে এক বছরের জন্য ইরাক যুদ্ধে পাঠানো হয়। তিনি প্রায় দুই দশক সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেন। এর পাশাপাশি পড়াশুনা ও রাজনীতিও চালিয়ে যান। ২০০৯ সালে হাওয়াই স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে সায়েন্স ইন বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে স্নাতক হন তিনি।

২০১২ সালে তুলসি হাওয়াই রাজ্য থেকে প্রথমবার মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সদস্য নির্বাচিত হন। ভগবৎ গীতা হাতে নিয়ে শপথ নেন তিনি। সে সময় তিনি বলেন, ‘আমি বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী।’ এরপর আরও তিনবার নির্বাচিত হন।

তুলসি ২০২০ সালে নির্বাচনে আর প্রার্থী হননি এবং পরিবর্তে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে নামেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্য দেশের সাথে সামরিক সংঘাতে জড়ানোর বিরোধিতা করেন। কিন্তু সুবিধা করতে না পারায় প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ান এবং জো বাইডেনকে সমর্থন করেন।

২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে ‘বর্ণবিদ্বেষী’ কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে ডেমোক্রেটিক পার্টি ছাড়েন তুলসি। এরপর রিপাবলিকানদের সঙ্গে হাত মেলান। যোগ দেন ফক্স নিউজে। এমনকি নিজের একটি পডকাস্টও চালু করেন তিনি।

এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গত অক্টোবরে উত্তর ক্যারোলিনায় ট্রাম্পের সমাবেশে যোগ দেন তুলসি। এমনকি হ্যারিসের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের প্রস্তুতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তিনি।

অতীতের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাদের মতো তার বিশেষ অভিজ্ঞতা নেই। সরকারে কোনো শীর্ষস্থানীয় পদেও ছিলেন না। এরপরও তাকেই জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।