• ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

দখল-বেদখলে বিপর্যস্ত বনভূমি, উদ্ধারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত জুলাই ১৫, ২০২৪
দখল-বেদখলে বিপর্যস্ত বনভূমি, উদ্ধারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই

দেশের বনাঞ্চল দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। সারা দেশে বনের জমির ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ দশমিক ৮৪ একর বেদখল হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ একর সংরক্ষিত বনের জমি। সংরক্ষিত বনভূমির দখলদার চিহ্নিত হয়েছে ৮৮ হাজার ২১৫ জন। বনের এসব জমি দখল করে করা হয়েছে শিল্প-কারখানা, রিসোর্ট, বসতভিটা। আবার অনেক জায়গায় বনের জমি দখল করে করছেন চাষাবাদ। প্রভাবশালীদের নাম থাকায় বনের জমি উদ্ধার হয় না। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের বনভূমি চরমভাবে হুমকির মুখে। সেখানে বন বিভাগও অবৈধ দখলদার ও বনখেকোদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো অবস্থান নিতে পারছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মামলা-মোকদ্দমা করে দায় শেষ করছে তারা। আইনি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার ফলে বনের জমি দখল ও গাছ উজাড় হয়ে যাচ্ছে ঠিকই।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক থিমেটিক কমিটির সভার আলোচনায় উঠে আছে এ সকল তথ্য। সভাটি ১৫ জুলাই ২০২৪ (অদ্য) তারিখে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। বর্ণিত সভায় কমিশনের সম্মানিত সদস্য ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, পিকেএসএফ-এর পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহেমেদ, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভোলপমেন্টে নির্বাহী মোহাম্মদ সামসুদ্দোহাসহ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বন অধিদপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ১৪টি আলোচ্যসূচির উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়; আলোচনায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এ থিমেটিক কমিটির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ প্রেরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কনফারেন্স অব পার্টিজ-২৯ (কপ-২৯) এর প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা হয়। লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ডে ধনী দেশগুলো টাকা দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দেয় তাতে বাধ্যবাধকতা আরোপের জন্য একটি ইন্টারন্যাশনাল ‘এইড ল’ থাকার বিষয়ে সরকারকে সুপারিশ প্রেরণের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া, পোশাক শিল্পে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাবের জন্য উন্নত বিশ্বের ক্রেতাদের দায়ী করা হয়। তারা শুধু মূল্য পরিশোধ করছে; পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাবের জন্য আলাদা মূল্য পরিশোধ করার বিষয়ে কপ-২৯ এ প্রস্তাবনা রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে এডভোকেসী পরিচালনা করবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি অর্থনৈতিক বা অ-অর্থনৈতিক হতে পারে। ফলত ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ চুক্তির আওতায় ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে তহবিল আদায় ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে এখন অব্দি কোনো ‘ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ’ বা দেশে সংগঠিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির সুষ্পস্ট ‘রেকর্ড কিপিং’ করে উঠতে পারে নি বাংলাদেশ। তহবিল/ ক্ষতিপূরণ পেতে হলে স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। সেজন্য স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে এবং এ ব্যাপারে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবর কমিশন হতে সুপারিশ প্রেরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় আরোও আলোচনা হয় যে, অতিবৃষ্টি ও বন্যা মোকাবেলাসহ অতিবৃষ্টির পানি ধরে রাখতে ও পরিবহন করতে হাওর ও নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ক্রমাগত অপরিকল্পিত উন্নয়ন, নদী-হাওর-বিল দখল ও ভরাট, নদীর নাব্য সংকট, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, জমি ভরাট ও পূর্ব-পশ্চিমে আড়াআড়ি মহাসড়ক নির্মাণ বন্ধ করতে কমিশন সরকারের নিকট একটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করবে।
দেশের বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মরুকরণ, বরেন্দ্র অঞ্চলের তীব্র পানি সংকট, উপকূল অঞ্চলে লোনা পানির প্রবেশ, রাজধানী ঢাকায় জলাবদ্ধতাসহ বেশি কিছু প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট সংকটের কারণে জনস্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এসকল সংকট দূর করেতে ভূপৃষ্ঠের পানির জলাধার খননের পাশাপাশি বিদ্যমান নদী, বিল এবং পুকুর পুনঃখননে উদ্যোগ গ্রহণ; পানির সংকটাপন্ন এলাকায় পানি-নিবিড় বোরো ফসলের বিকল্প হিসেবে কম পানি ব্যবহার করা হয় এমন ফসলের চাষ উৎসাহিতকরণ; শহরাঞ্চলের দখলকৃত সকল জলাধার, খাল উচ্ছেদপূর্বক পানি প্রবাহ নিশ্চিতকরণে কার্যকর রূপরেখা প্রণয়ন; পর্যাপ্ত সংখ্যক বৃক্ষরোপন এবং বেশি মাত্রায় খাল, পুকুর খনন করতে হবে, যাতে লবণাক্ততার মাত্রা ১০ পিপিটিতে পৌঁছানো পর্যন্ত কার্যকারিতা বজায় থাকে; লোনা পানিবাহিত নানারকম রোগের বিস্তরণ মোকাবেলায় স্থানীয় হাসপাতালসমূহে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তার পদায়ন করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঔষধের সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে কমিশন সরকারের সংশ্লিষ্টদের সুপারিশ প্রেরণ করবে।
অপরদিকে বায়ুদুষণ রোধকল্পে সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ যথাযথ পদ্ধতি ও নীতিমালা মেনে পরিচালনার প্রতি কমিশন জোর আরোপ করে। বায়ুদুষণ রোধে বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২ এবং আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে রায় কার্যকরকরণে সর্বান্তরকরণে সচেষ্ট থাকতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরেকে কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
সীমান্তঘেঁষা ৩৫টি জেলায় বিস্তার ঘটেছে ‘পার্থেরিয়াম’ নামের এক উদ্বেগজনক আগাছার। এটি বেগুন, টমেটো, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের পরাগায়ন কমিয়ে দেয়। ধান, ছোলা, সরিষা, গমসহ বিভিন্ন ফসলের অঙ্কুরোদ্গম ও বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। ফলে পার্থেনিয়ামের বিস্তার খাদ্যনিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। এ আগাছার বিস্তার রোধকল্পে জেলা প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিভিল সার্জন দপ্তর, জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাকে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্লান্ট কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদানে সভায় সকলে ঐক্যমত্য প্রকাশ করেন।

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930