• ২৪শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৪শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

নারায়ণগঞ্জে বাবাকে কৌশলে বাইরে পাঠিয়ে শিশুকন্যাকে ধর্ষণ

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত আগস্ট ৯, ২০১৯
নারায়ণগঞ্জে বাবাকে কৌশলে বাইরে পাঠিয়ে শিশুকন্যাকে ধর্ষণ

আট বছরের শিশুকন্যাটি প্রায়ই দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুমের মধ্যে কেঁদে উঠত। নিম্ন আয়ের পরিবারটি তাই মেয়ের ঝাড়ফুঁকের জন্য যোগাযোগ করে ফজলুর রহমান নামে এক ইমামের সঙ্গে। সে দুই-তিনবার মেয়েটিকে ঝাড়ফুঁক করে। তাতেও কোনো কাজ না হওয়ায় ‘বাড়ি বন্ধ’ করা চিকিৎসা দেয়। তাতেও কাজ না হওয়ায় গত সোমবার ফজরের নামাজের পর শিশুটিকে মসজিদে নিয়ে যেতে বলে তার বাবাকে।

বাবা মেয়েটিকে নিয়ে মসজিদে গেলে ইমাম তাকে মোম ও আগরবাতি আনতে বাইরে পাঠায়। এই সুযোগে মেয়েটির দুই হাত বেঁধে ও মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ধর্ষণ করে ইমাম ফজলুর রহমান। এরপর মেয়েটির গলায় ছুরি ধরে হত্যার ভয় দেখিয়ে এ কথা কাউকে না বলতে শাসিয়ে দেয়।

মেয়েটির বাবা মোম ও আগরবাতি নিয়ে ফিরে এলে ফজলুর রহমান শিশুটিকে তার কাছে বুঝিয়ে দিয়ে তড়িঘড়ি বিদায় দেয়। শিশুটি বাড়ি ফিরে বাবা-মাকে সব খুলে বললে তারা মসজিদ কমিটির কাছে বিচারপ্রার্থী হয়। কিন্তু মসজিদ কমিটির লোকজন বিচার না করে উল্টো তাদের হুমকি দেয়।

এদিকে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ওই দিন বিকেলে তাকে নারায়ণগঞ্জ দেড়শ’ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও ইমাম ফজলুর রহমানের অনুসারীরা হানা দিয়ে পরিবারটিকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়। উপায় না দেখে মেয়েটির বাবা এক নার্সের কাছ থেকে একটি বোরকা চেয়ে নিয়ে সেটি পরে র‌্যাব-১১-এর সিদ্ধিরগঞ্জ প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে সহায়তা চায়। তাৎক্ষণিক র‌্যাবের একটি টিম নারায়ণগঞ্জ দেড়শ’ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে শিশুটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

পরে অভিযান চালিয়ে বুধবার ভোরে ইমাম ফজলুর রহমানকে চাঁদমারি এলাকার বায়তুল হাফেজ জামে মসজিদের তৃতীয় তলা থেকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় ফজলুর রহমানের অপর পাঁচ সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়। তারা হলো- রমজান আলী, গিয়াস উদ্দিন, হাবিব এ এলাহী, মোতাহার হোসেন ও শরিফ হোসেন।

র‌্যাব-১১-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন বলেন, মেয়েটির বাবা একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে কাজ করেন। মা পোশাক শ্রমিক। শিশুটি ফতুল্লার একটি মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। শিশুটি রাতে ঘুমের মধ্যে প্রায়ই কেঁদে উঠত। দরিদ্র পরিবারটি শিশুটির এ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন কবিরাজের কাছে ঝাড়ফুঁক চিকিৎসা করায়। তাতে কোনো কাজ না হওয়ায় তারা জানতে পাওে, চাঁদমারি বায়তুল হাফেজ জামে মসজিদের ইমাম ফজলুর রহমান ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করেন।

তিনি জানান, এতেও কাজ না হওয়ায় মেয়েটিকে ৫ আগস্ট ফজরের নামাজের পর মসজিদে নিয়ে গেলে ইমাম ফজলুর রহমান বাবা-মেয়েকে মসজিদের তৃতীয় তলায় ইমামের শয়নকক্ষে নিয়ে যায়। এরপর মেয়েটির বাবাকে মোম ও আগরবাতি আনতে বাইরে পাঠিয়ে দেয় সে। কিন্তু এত ভোরে কোনো দোকান খোলা না থাকায় মেয়েটির বাবা বাইরে দোকান খোলার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এরই মধ্যে ফজলুর রহমান মেয়ের বাবাকে ফোন করে তার জন্য একটি পানও নিয়ে আসতে বলে। আর মসজিদের মুয়াজ্জিনকে নিচের কলাপসিবল গেটে তালা লাগাতে বলে।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, এরপর ফজলুর রহমান শিশুটিকে হাত বেঁধে এবং মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে আলামত নষ্ট করতে নিজেই পানি দিয়ে শিশুটির ক্ষতস্থান ধুয়ে দেয়। পরে গলায় ছুরি ধরে এ কথা কাউকে না বলতে শাসিয়ে দেয়। এ কথা কাউকে জানালে গলা কেটে হত্যারও হুমকি দেওয়া হয় মেয়েটিকে। ৪০-৪৫ মিনিট পর বাবা মোম ও আগরবাতি নিয়ে মসজিদে ফিরে এলে ফজলুর রহমান তড়িঘড়ি শিশুটিকে তার বাবার কাছে বুঝিয়ে দেয়। মেয়েটি বাড়ি ফিরে সব ঘটনা বাবা-মাকে খুলে বলে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনা জানার পর মেয়েটিকে নিয়ে তার বাবা ওই দিনই মসজিদ কমিটির কাছে এর বিচার দাবি করেন। মসজিদ কমিটির কিছু লোক ও আশপাশে থাকা ধর্ষকের ভক্তরা মিলে শিশু ও তার পরিবারটিকে চরমভাবে হেনস্তা করে। ধর্ষক ফজলুর রহমান তার অনুসারীদের দিয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি কওে, যেন ভুক্তভোগী পরিবারটি থানা বা হাসপাতালে যেতে না পারে। এর পর শিশুটির অবস্থা খারাপ হলে ওই দিনই তাকে নারায়ণগঞ্জ দেড়শ’ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গোপনে ভর্তি করা হয়।

তিনি জানান, ধর্ষক ফজলুর রহমান ও তার অনুসারীরা শিশুটিকে হত্যা ও অপহরণের উদ্দেশ্যে হাসপাতালেও কয়েক দফা চেষ্টা চালায়। শিশুটিকে হাসপাতালে লুকিয়ে তার বাবা-মাকে দীর্ঘ সময় হাসপাতালের টয়লেট ও বেডের নিচে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার রাতে একপর্যায়ে শিশুটির বাবা হাসপাতালের এক নার্সের কাছ থেকে একটি বোরকা চেয়ে নিয়ে তা পরে অফিসে এসে অভিযোগ দেন। পরে বুধবার ভোরে হাসপাতালে গিয়ে শিশুটির নিরাপত্তা এবং চাঁদমারি এলাকা থেকে ধর্ষক ইমামসহ তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। 

March 2025
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031