• ২৪শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৪শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ২০৪১ এর অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে ফিকি’র অধিবেশন

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত নভেম্বর ২০, ২০২৩
প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ২০৪১ এর অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে ফিকি’র অধিবেশন

রাজীব কান্তি দে,ঢাকা

বিগত পাঁচ দশকের গৌরবময় যাত্রায় বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে নিজেদের অনন্য স্থান নিশ্চিত করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার ও তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে ভিশন-২০৪১ অর্জনে বাংলাদেশ একটি মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যবসা-বানিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন-কে উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে গণ্য করে এগিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশকে।

ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিযোগীতা বৃদ্ধির উপর আরও বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন। এটি বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থানকে সুদৃঢ় করার প্রত্যয় ও টেকসই প্রচেষ্টাকে তুলে ধরবে। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব শক্তিশালী করতে ব্যাপক নীতি অনুসন্ধান, কৌশলগত সংস্কার এবং উদ্যোগ অপরিহার্য।

বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সংযোগের সমন্বয় সাধনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা টেকসই প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিময় ভবিষ্যতের সূচনা করে, বৈশ্বিক ল্যান্ডস্কেপের অন্যতম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করবে।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (ফিকি) কর্তৃক আয়োজিত ‘৬০ বছর পূর্তী উদযাপন ও বিনিয়োগ মেলা ২০২৩’ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে ‘ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেটঃ কারেন্ট ল্যান্ডস্কেপ অ্যান্ড ভিশন ২০৪১’-শীর্ষক এক অধিবেশনে বক্তারা এ মতবাদ ব্যক্ত করেন।

অধিবেশনের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও মূল বক্তব্য সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. এম. মাসরুর রিয়াজ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ফিকি’র প্রাক্তন সভাপতি রূপালী চৌধুরী।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-এর সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ; এমসিসিআই-এর সভাপতি সাইফুল ইসলাম; জেট্রো ঢাকা-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউহি অ্যান্ডো; কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সীর ঢাকা কোরিয়া ট্রেড সেন্টার-এর ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (মহাপরিচালক) সামসু কিম-সহ প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, “বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে পুঁজির প্রবাহকে সহজতর করতে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে আমাদের সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে বিনিয়োগজনিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা, বৈচিত্র্যের প্রচার করা এবং লজিস্টিক নীতিগুলোকে উন্নত করা আবশ্যক। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পিপিপি প্রকল্প এবং ব্লু-ইকোনমি অনুসন্ধান-সহ নানা প্রচেষ্টা বেসরকারী খাতের সাথে আমাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করে। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশকে একটি লাভজনক বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলাই এই প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য।”

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. এম. মাসরুর রিয়াজ বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়নের সূচনালগ্ন থেকে বিশ্বের একটি প্রতিযোগীতামূলক দেশ হিসেবে নিজেদের গঠন করাই ছিলো আমাদের মূল লক্ষ্য। এছাড়াও, বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের বাণিজ্য করার সু্যোগ তৈরি, ডব্লিউটিও ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন চুক্তি, ডিজিটালাইজেশনের প্রতিশ্রুতি ছিলো এই কর্মকাণ্ডের মূল বিষয়বস্তু। তবে, শুধুমাত্র প্রতিযোগীতা নয় বরং ২০৪১ সালের মধ্যে নিজেদের উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলাই ছিলো এর আসল উদ্দেশ্য।”

বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী হক চৌধুরী বলেন, “আমি মনে করি অর্থনৈতিক উন্নয়নে তিনটি মূল চালিকা শক্তি বানিজ্য, বিনিয়োগ ও সংযোগ স্থাপন-কে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। স্থানীয় বিনিয়োগের সাথে সাথে বৈদেশিক বিনিয়োগগুলো উন্নয়নের এই ধারাতে বিশেষ অবদান রেখেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে হাজির হতে পারবো।”

জেট্রো ঢাকা-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউহি অ্যান্ডো বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক সহয়তায় চলমান প্রকল্পগুলোর প্রায় অর্ধেক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা হলো জাপানিজ। তাছাড়াও, বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের জাপানিজ কোম্পানীগুলো এ দেশে আরও নতুন নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের এই গৌরবময় যাত্রায় অংশীদার হতে জাপান সর্বদা বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখছে।”

ঢাকা কোরিয়া ট্রেড সেন্টার-এর ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (মহাপরিচালক) সামসু কিম বলেন, “বাংলাদেশে কোরিয়া চতুর্থ বৃহতম এফডিআইয়ের অংশীদার। আমি মনে করি, ব্যবসায়িক কার্যক্রম সংগঠনের জন্যে বাংলাদেশ একটি আদর্শ ক্ষেত্র এবং কোরিয়ান কোম্পানী নিয়ে আরও প্রচার বাড়ানো উচিত। তবে, শ্রম বাজারকে সুগঠিত করে প্রণোদনা প্রদানের সু্যোগ তৈরি করলে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের পলিসিকে আরও সংশোধিত করলে কোরিয়া ছাড়াও অন্যান্য বিশ্বের অন্যান্য দেশ এখানে এসে কাজ করার সুযোগ পাবে।”

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-এর সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, “এনবিআর, বিডা, বেজা-সহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান দেশে স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ স্থাপনে সাহায্য করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে আমাদের মন্ত্রণালয় আমদানী-রপ্তানী প্রক্রিয়াকে আরও সহজতর করে গড়ে তোলার চিন্তা-ভাবনা করছে রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো। এছাড়াও, এই প্রক্রিয়ায় সেবাদানকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে আমরা ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে এসেছি। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্যে একটি আদর্শ স্থান হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করা।”

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) সম্পর্কে-
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শীর্ষ চেম্বার ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) ১৯৬৩ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ সার্বিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। একটি শীর্ষস্থানীয় চেম্বার হিসাবে ফিকি বাংলাদেশের ২১টিরও বেশি খাতে বিশ্বের ৩৫টি দেশজুড়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্ব করে। ছয় দশকের এই অনন্য যাত্রায় চেম্বারের ২০০টিরও বেশি সদস্য প্রতিষ্ঠান সরকারের অভ্যন্তরীণ প্রায় ৩০% রাজস্ব আয়ে অবদান রাখছে এবং বাংলাদেশে ৯০% এর বেশি অভ্যন্তরীণ এফডিআই-এর প্রতিনিধিত্ব করছে। ফিকি-এর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে এবং সামাজিক কল্যাণে অবদান রাখে দেশের উন্নয়নে কাজ করছে।

March 2025
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031