• ২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৪শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

বন্ধুত্বের রসায়ন : সাইন্সের দৃষ্টিতে কারা আপনার প্রকৃত বন্ধু?

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৯
বন্ধুত্বের রসায়ন : সাইন্সের দৃষ্টিতে কারা আপনার প্রকৃত বন্ধু?

দুনিয়ার সব রিলেশনই স্বার্থগত। তবে প্রকৃত ফ্রেন্ডশিপে স্বার্থপরতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে পারস্পারিক সহযোগিতার প্রাচুর্যতা। প্রকৃত বন্ধুকে বন্ধু ডাকা লাগে না। প্রকৃত বন্ধুকে হেন্ডশেক করতে হয় না। প্রকৃত বন্ধুকে দিনের শুরুতে দেওয়া গুড মর্নিংয়ের রিপ্লেসমেন্টটা হয় মাতৃতান্ত্রিক কোন গালি দিয়ে। প্রকৃত বন্ধুকে রিক্সা থেকে নামতে হয় ভাড়া না দেওয়ার বৈধ অধিকার নিয়ে। প্রকৃত বন্ধুকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের চারকোনা টেবিলে বসলে প্রাচীন সমাজের খাদ্য প্রতিযোগিতার ফ্লেভার পাওয়া যায়।

তারপরও একগুচ্ছ আফসোস! এই ধরনের কমন খুনসুটির পরিপূর্ণতা সবসময় প্রকৃত দোস্তির জানান দেয় না। আচ্ছা জানান না দিক, প্রকৃতটা আসলেই প্রকৃত কিনা তার একটা লিটমাস টেস্ট করে নেওয়া যাক।

আমাদের বন্ধুত্বের ‘প্রকৃত’ রূপটা মূলত মস্তিষ্কের অন্তরালে সংগঠিত হওয়া ক্যামিকেল ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফসল মাত্র। রাসায়নিক বন্ধুত্বের অস্তিত্ব পাওয়া যায় তার সাথেই, যে বন্ধুর সাথে বার বার দেখা করতে মন চায়, ঘন্টার পর ঘন্টা পার করলেও কোন ক্লান্তিবোধ জন্মায় না, অবস্থানগতভাবে দূরে থাকলে ইচ্ছা জাগে মুঠোফোনের মাধ্যমে অজানা কোন এক আকর্ষণের সাম্পানে পাশাপাশি বসে সুখ-দুঃখের অনুভূতিগুলো শেয়ার করার।

এই অজানা আকর্ষণবোধ তৈরী করে এন্ডরফিনস নামক একপ্রকার দুষ্টু হরমোন। বন্ধু যত দূরে থাকে এন্ডোরফিনসের প্রভাব যায় ততো বেড়ে। একদম কাছে এলে প্রভাব শিথিল হয়, মন শান্ত হয়, আবেগ কমায় আর এক ধরনের নিরাপত্তাবোধ তৈরী হয়। এই এন্ডোরফিনস নামক তেজী ঘোড়ার লাগাম নিয়ন্ত্রক আবার অক্সিটোসিন হরমোন। অক্সিটোসিন এন্ডোরফিনসকে বেশি পরিমাণে নিসৃত হতে ট্রিগার করে। অক্সিটোসিন পৃথিবীর সকল রিলেশনের মাতৃদেবী। এন্ডোরফিনস হরমোন আবার অসীম বন্ধুত্বের মধ্যেও একটা সীমারেখা টেনে দেয়। এর প্রভাব গড়ে ৫ থেকে ৮ জন বন্ধুর মধ্যে থাকে। অর্থাৎ বন্ধুত্বের রসায়ন সাধারণত আটজনের বেশিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। অনেক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো কম হতে পারে।

মোদ্দাকথায় আসল বন্ধুত্ব ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ শব্দের মোড়কে সাজানো গোছানো এক অকৃতিম আসক্তি। এই আসক্তির প্রভাব মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকতে পারে। আর্থ-সামাজিক অবস্থান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কারণ হয়ে দাঁড়ায় না এই ন্যাচারাল এডিকশন বাধাগ্রস্ত করতে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন সাধারণত ৭ বছর পর্যন্ত যদি ভাব বিনিময় চলতে থাকে তাহলে এই বন্ধুত্ব নষ্ট হয়না। তবে অবস্থাভেদে সময় কমও লাগতে পারে।

এজন্যই স্কুল-কলেজের বন্ধুত্বগুলোতে জাগতিক স্বার্থের ঘ্রাণ অপেক্ষাকৃত কম পাওয়া যায়। কারণ এখানে নির্দিষ্ট হরমোনগুলোর আধিপত্যতা সকল ক্ষুদ্র স্বার্থের ঊর্ধ্বে।

বন্ধুত্বের এই জৈব-রাসায়নিক সমীকরণকে ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্যের ব্রান্ডিং ও মার্কেটিং হয়। এজন্য ব্রান্ড জিনিসটা আমাদের ইমোশনের সাথে খুব বেশিভাবে জড়িতে হয়ে পড়েছে। কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ফ্রেন্ডশিপ, ভালবাসা ইত্যাদি সেন্সিটিভ ও এডিকটিভ বিহেভিয়ারগুলোকে মৌলিক ভিত্তি ধরে পণ্যের বাজারজাত করে। এডিকশন যেখানে উপস্থিত সেখানে মুনাফার অংকটা হুরহুর করে বেড়ে যায়। এয়ার্টেল, গ্রামীণফোনদের প্রধান টার্গেট মার্কেটই থাকে ইয়ুথ ফ্রেন্ডশিপ। বন্ধু আর প্রেমিকার জন্য টেলিকম অপারেটরদের কাছ থেকে সময়ের মূল্য কিনতে হয়। এভাবেই চলতে থাকে অন্তর্মহলের কেমিস্ট্রির সাথে বাইরের কমার্সের একাত্বতা।

আমাদের এসব কিছুই চাইনা, শুধু চাই বন্ধুত্বের একমুঠো বিশুদ্ধ ভালবাসা আমৃত্যু সঙ্গী থাক।

হাকালুকিডটনেট/অয়ন/৪সেপ্টেম্বর/

January 2025
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031