ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বাংলার সমৃদ্ধ লোক সংস্কৃতি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্বের ৩৫ কোটি মানুষের মুখের ভাষা বাংলা । আর বাংলাদেশই বাংলা ভাষার রাজধানী, বাংলাদেশেই বাংলা ভাষা বেঁচে থাকবে। বাংলাদেশের জন্মের মূল ভিত্তি হচ্ছে বাংলা সাহিত্য, বাংলা ভাষা, বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে জাতি রাষ্ট প্রতিষ্ঠা করেছেন। তারই সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। একজন বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ পেতাম না এবং শেখ হাসিনা না থাকলে আজকের বাংলাদেশ আমরা পেতাম না।
বিশ্ব লোক সংস্কৃতি কেন্দ্রের পরিচালক রাশেদুল হাসান শেলী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) এর চেয়ারম্যান মো. আবদুস সামাদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, লোক গবেষক অধ্যাপক আফজালুর রহমান ভূঁইয়া, আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক দেবকন্যা সেন, বাউল সাধক ও সংগীত শিল্পী শফি মণ্ডল এবং লোক সংগীত শিল্পী কুদ্দুছ বয়াতি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, যে জাতির সংস্কৃতি নাই সে জাতি পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। শতবছর আগে প্রকাশিত ময়মনসিংহ গীতিকা সাধারণ মানুষের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা পালা। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার অঞ্চল-ভিত্তিক লোক সংস্কৃতি আমাদের অতি মূল্যবান সম্পদ। এটা আমাদের সৌভাগ্য যে বাংলাদেশই আজ সারাবিশ্বে বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত বলেন, আমাদের মৈমনসিংহ-গীতিকার মূল ভাবাদর্শের দিকে নজর দিতে হবে। এটি বিশ্বসাহিত্যে অসাধারণ জায়গা দখল করে নিয়েছে। সেজন্য এটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ একান্ত আবশ্যক। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উদ্ভাবক জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, মৈমনসিংহ গীতিকা একটি সংকলনগ্রন্থ। এটির সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে এবং ড. দীনেশচন্দ্র সেন এই সংকলনগ্রন্থটি প্রকাশ করেন।
মন্ত্রী বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের উদ্দেশ্য হচ্ছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি, লোক গাঁথা কিংবা লোক সাহিত্য বিকশিত করার পাশাপাশি পুরো বাংলাদেশের লোক সংস্কৃতি, লোক গাঁথা কিংবা লোক সাহিত্যকে বিশ্বে তুলে ধরার চেষ্টা অব্যাহত রাখা। ২০১৫ সাল থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ফোরামের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মৈমনসিংহ গীতিকার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পুনর্মুদ্রণ প্রকাশ, পূর্ব বাংলা গীতিকার পুনর্মুদ্রণ করার উদ্যোগসহ বাংলার লোক সংস্কৃতি বিশ্ব লোক সাহিত্যের সম্পদ হিসেবে তুলে ধরতে ফোরামের গৃহীত কর্মসূচি তুলে ধরেন মন্ত্রী । তিনি বলেন, বৃহত্তর মযমনসিংহ বিশেষ করে গারো পাহাড়ের পাদদেশ থেকে প্রবাহিত হাওরাঞ্চলের প্রাচীন জীবন গাঁথা মৈমনসিংহ গীতিকায় উঠে এসেছে। এটার যেমন সাহিত্য মূল্য আছে তেমনি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে রয়েছে এর নিবিঢ় সম্পর্ক। বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রতিটি জনপদে সাহিত্য সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে। শেকড় থেকে উঠে আসা এসব সংস্কৃতি আমাদের জাতীয় সম্পদ। তিনি বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের লোক সংস্কৃতিও রূপান্তরিত হয়েছে ঐতিহ্যে। ময়মনসিংহ গীতিকা বিশ্ব দরবারে অলংকৃত করেছে ময়মনসিংহের নিজস্ব পরিচয়।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ২১ বছর সময়কালে এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আবারও বিনষ্ট হয় এবং এদেশের ভাগ্যাকাশে নেমে আসে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় যা অব্যাহত রয়েছে।
পরে মৈমনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে ‘মলুয়া পালা’ পরিবেশিত হয়।