আজ ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ ইং,সোমবার, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুজিব বাহিনীর স্রষ্টা, স্বনামধন্য লেখক, বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বাংলার যুব আন্দোলনের পথিকৃত, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি’র ৮৫ তম জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে সকাল ৯:৩০ টায়, বনানী কবরস্থানে শহীদ শেখ ফজলে হকসহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, দোয়া ও মোনাজাত এবং দুপুর ১২ ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন-শেখ ফজলে শামস্ পরশ, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-আমির হোসেন আমু এমপি, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সমন্বয়ক ও মুখপাত্র কেন্দ্রীয় ১৪ দল। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সঞ্চালনা করেন-আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন-শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি’র অনুসারী ও সহকর্মীদের ভাষায়, তিনি বাংলাদেশের বিপ্লবে সংগ্রামে এক অকুতোভয় নেতা ছিলেন। সন্তান হিসেবে আমি গর্ববোধ করি যে তিনি রণাঙ্গনেও নিজে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য। মুজিবাহিনীর শীর্ষনেতাদের মধ্যে তিনিই সবার আগে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন বলে যানা যায়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশে ঢুকার আগেই, ২৩ নভেম্বর জেনারেল উবানের নেতৃত্বে দেশের পূর্বাঞ্চলে শুরু হয় “অপারেশন ঈগল”। শেখ মণি বিএলএফের কয়েকজন সদস্য নিয়ে তাদের সঙ্গে “অপারেশন ঈগলে” যোগ দিয়ে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। জেনারেল উবানের বর্ণনায়, “অদম্য সাহসের অধিকারী স্থিরপ্রতিজ্ঞ শেখ মণি। পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ ভূমিতে আসল যুদ্ধের সময় আমার সঙ্গে ছিলেন। তিনি শুধু নেতা না, তিনি সর্বোপরি একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। আমাদেরও নেতা হওয়ার আগে সর্বপ্রথম কর্মীদের কাতারে যেয়ে কর্মী হতে হবে। জেনারেল উবান আরও লিখেছেন, “হালকা পাতলা গড়নের মানুষটি যেন এক জ্বলন্ত মশাল। তাদের স্বাভাবিক নেতা বলে মনে হত তাঁকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি অত্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এবং যে কোন আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তিনি ছিলেন আন্তরিক, বন্ধুদের প্রতি সংবেদনশীল, আর শেখ মুজিবের একান্ত অনুরক্ত ভক্ত। প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর একটা প্রধান শক্তির নাম শেখ ফজলুল হক মণি। শেখ মণি বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা অসম্ভব হয়ে যেত; এটা ওই ’৭৫-এর খুনিরা ভালভাবেই জানতো। তাই তারা শেখ মণিকেই প্রথমে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তিনি আরও বলেন-শেখ মণি আমাদের কাছে বিশ্বস্ততারও প্রতীক। তিনি আরও বলেন, শেখ ফজলুল হক মণি’র অনুসারী এবং সংগঠনের কর্মী হিসেবে আমরাও গর্বের সঙ্গে বুক চাপিয়ে বলতে পারি, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্য সর্বোচ্চ আত্মহুতি দিতে গর্ববোধ করবে। শেখ মণি যেভাবে উপলব্ধি করতেন যে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়বিচারসম্পন্ন জাতিরাষ্ট্র নির্মাণের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নাই, ঠিক একইভাবে শেখ মণি’র উত্তরসূরি হিসাবে আমরা আজকের যুবলীগ মনে করি, একটি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, উন্নয়নশীল ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নাই। তিনি বলেন-স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, যুব রাজনীতির মহাপ্রাণ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিক, লেখক ও সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মণি বাংলার ইতিহাসের সংগ্রাম ও সাফল্যের অসংখ্য অকাট্য দলিল রচনা করে গেছেন মাত্র ৩৫ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে। তাঁর লেখনী থেকে একটা ধারণ করা যায় যে, তিনি বাংলাদেশে একটি জ্ঞানভিত্তিক প্রগতিশীল, বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থা সৃষ্টির বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। সেই লক্ষ্য অর্জনে আজকের প্রেক্ষাপটে আমাদের ভিন্নি ধরণের যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে। তাই আজ যুবলীগের মূল কাজ দুইটিঃ একটি রাজনৈতিক এবং আরেকটি সামাজিক। রাজপথে যেমন যুবলীগ, প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করছে, তাদের জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সমুন্নত রাখা ও রক্ষা করার প্রশ্নেও সোচ্চার থাকতে হবে। একই সাথে সমাজিক দায়িবদ্ধতার অংশ হিসেবে সামাজিক ন্যায় বিচার কায়েম করা, ধর্মনিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করা এবং যুবসমাজকে উদ্ভুদ্ধ করা। যুবসমাজের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা এবং আমাদের নেত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মানবিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কর্মকান্ডে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য। সংগ্রামে যুবলীগে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে, বিজ্ঞানভিত্তিক সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে নেতৃত্ব দেবে। তিনি আরও বলেন-বাঙালি শিল্প, সংস্কৃতিক ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটবে। একটা প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ, মর্যাদাশীল, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ শেখ মণি দেখতে চেয়ছিলেন । যে বাংলাদেশ শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান চর্চায় সারা বিশ্বে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। যেখানে সুশাসন কায়েম থাকবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টম-লীর সদস্য জননেতা আমির হোসেন আমু বলেন, সর্বপ্রথম আইয়ুববিরোধি দুইটি আন্দোলনের মুল নেতা ছিলেন শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ মণি। বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দাবি দিলে সেই দাবি আদায়ের জন্য ছাত্র-শ্রমিক নেতাদের মাধ্যমে সফল হরতাল পালন করেন তিনি। শিক্ষা জীবন শেষ করার পরেও তিনি থেমে থাকেননি। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হলে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গবদ্ধ করতেন, আন্দোলনের নির্দেশনা দিতেন। শেখ মণি একদিকে যেমন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন, অন্য দিকে তেমনি সাহসী লেখকও ছিলেন। তিনি শুধু যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা নয়, তিনি এদেশের রাজনীতির গতিধারা পরিবর্তনের অন্যতম পুরোধা নেতৃত্ব। তিনি আরও বলেন-তিনি অনেক পড়াশুনা করতেন বিধায়, একজন লেখক ও চিন্তাবিদ হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে পেরেছিলেন। ১৯৬১ সালে সোহরাওয়ার্দীর মুক্তিসহ গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রের দাবিতে সারাদেশ থেকে ছাত্রদের ডেকে এনে শেখ মণি সংগ্রাম করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শেখ মণি বিএলএফ (বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স) এর লিফলেট বিতরণ করেছিলেন। এই স্বাধীনতার আন্দোলন ১৯৬১ সাল থেকে শেখ মণি’র মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ শুরু করেছিল।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন-খুনিচক্র, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, ঐ অপশক্তি যারা বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারে নাই, যারা পাকিস্তানের দালাল, যারা পাকিস্তানের আদর্শে, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আদর্শে যারা বিশ্বাস করত তারা ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবার ও শহীদ শেখ ফজলুল হক মণিকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল। তিনি আরও বলেন-এই দেশের অপরাজনীতির মূলহোতা বিএনপি-জামাত। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভক্ষক বিএনপি-জামাত। তারা দেশকে ধ্বংস করার জন্য অবৈধভাবে হরতাল-অবরোধ দিচ্ছে। তাদের হরতার-অবরোধ আর তাদের অপকর্মের কারণে মানুষ এখন হরতালকে ঘৃণা করতে শিখেছে। দু-চারটা পটকা ফুটিয়ে আর যাই হোক মুজিব আদর্শের সৈনিকদের, শেখ হাসিনার সৈনিকদের ভয় দেখানো যাবে না। বাংলাদেশের যুবসমাজ বিএনপি-জামাতের দুর্নীতির রাজনীতি, নাশকতার রাজনীতি কায়েক করতে দিবে না। এটাই হোক শেখ মণির জন্মদিনের যুবলীগের শপথ।
সঞ্চালকের বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন-যখন আমরা শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি’র জন্মদিন পালন করছি, সেই সময় স্বাধীনতাবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামাত হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়েছে। যদিও এদেশর জনগণ তাদের অবৈধ হরতাল-অবরোধ ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। তিনি আরও বলেন-বিএনপি এখন আরও রাজপথে নেই। তারা অন্ধকারে চলে গেছে। অন্ধকার থেকে কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি, আর তা বাস্তবায়ন করছে স্বাধীনতাবিরোধী, ’৭৫-এর খুনিচক্র, ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীরা। বিএনপি-জামাতের দেশব্যাপী সকল ষড়যন্ত্রের সকল জবাব আগামী নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে দিবে এদেশের জনগণ।
আরও বক্তব্য রাখেন-ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন-যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম, ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন, মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মৃনাল কান্তি জোদ্দার, তাজউদ্দিন আহমেদ, মোঃ জসিম মাতুব্বর, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মোঃ মাজহারুল ইসলাম, ডা. হেলাল উদ্দিন, মোঃ সাইফুর রহমান সোহাগ, মোঃ জহির উদ্দিন খসরু, মোঃ সোহেল পারভেজ, মশিউর রহমান চপল, এ্যাড. ড. শামীম আল সাইফুল সোহাগ, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দপ্তর সম্পাদক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ জহরুল ইসলাম মিল্টন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক মোঃ শামছুল আলম অনিক, স্বাস্থ্য জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মোঃ ফরিদ রায়হান, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মীর মোঃ মহিউদ্দিন, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ হারিছ মিয়া শেখ সাগর, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মোঃ হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা, উপ-দপ্তর সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ রাশেদুল হাসান সুপ্ত, উপ-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুুক্তি সম্পাদক এন আই আহমেদ সৈকত, উপ-ক্রীড়া সম্পাদক মোঃ আবদুর রহমান, উপ-কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মোল্লা রওশন জামির রানা, উপ-ধর্ম সম্পাদক হরে কৃষ্ণ বৈদ্যসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।