• ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২২শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের ৫৪তম শাহাদাত বার্ষিকী

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত এপ্রিল ১৮, ২০২৫
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের ৫৪তম শাহাদাত বার্ষিকী

আজ ১৮ এপ্রিল, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের ৫৪তম শাহাদাত বার্ষিকী। এই দিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে সেই অকুতোভয় বীর’কে, যিনি জীবন উৎসর্গ করে রচনা করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। তাঁর বীরত্ব, আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম চিরকাল আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, বীরশ্রেষ্ঠ ১৩৫৪ সালের অগ্রহায়ণ (১৯৪৭ ইং) মাসের কোন এক বৃহস্পতিবারে ভোলা জেলার দৌলতখানা উপজেলাধীন পশ্চিম হাজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন হাবিলদার। অত্যন্ত ডানপিটে মোস্তফা কামাল দ্বিতীয় শ্রেণী শেষ করে স্কুল ত্যাগ করেন। পিতার কর্মস্থল কুমিল্লা সেনানিবাসে তাঁর বাল্যকালের অনেকটা সময়ই কেটেছে। সেনাবাহিনীর সুশৃঙ্খল জীবন তাঁকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করতো। ১৯৬৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর পারিবারিক নিষেধ অমান্য করে পালিয়ে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সিপাহী পদে যোগ দেন। সেনাবাহিনীর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে কুমিল্লায় চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে তাঁকে পোষ্টিং দেয়া হয়। সৈনিক জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দুর্বার, বক্সিং এ ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ। ১৯৭১ সালে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে তাঁকে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদর দপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়া বদলী করা হয় এবং সেখান থেকেই তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে তিনটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তোলে আশুগঞ্জ, উজানীশ্বর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এন্ডারসন খালের পাশে। কিন্তু এ সকল প্রতিরক্ষা ঘাঁটির উপর দখলদার বাহিনীর আক্রমণ প্রচণ্ড আকার ধারণ করলে তিনটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটির সৈন্যরা রণকৌশলগত পুনঃমোতায়েন এর মাধ্যমে আখাউড়া, আখাউড়ার দক্ষিণে সঙ্গী নগরে এবং এর উত্তরে দরুইনে নতুন করে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে। দরুইনে পাঠানো হয় ২নং প্লাটুনকে। সিপাহী মোস্তফা কামাল এই প্লাটুনের একজন সদস্য ছিলেন। তাঁর সাহস, বুদ্ধি ও কর্মদক্ষতার কারণে মেজর শাফায়াত জামিল তাঁকে মৌখিকভাবে ল্যান্স নায়েক পদ-মর্যাদা দিয়ে একটি সেকশনের দায়িত্ব প্রদান করেন।

১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য কুমিল্লা-আখাউড়া রেললাইন ধরে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১৭ এপ্রিল সকাল থেকে শত্রু দরুইন গ্রামে ২নং প্লাটুনের প্রতিরক্ষার উপর মর্টার দিয়ে গোলাবর্ষণ শুরু করে। পরের দিন বেলা ১১টার দিকে মোগরা বাজারের একটি উঁচু দালানের ছাদের ওপর বসানো একটি মেশিনগান থেকে শত্রু পক্ষ গোলাবর্ষণ শুরু করে দরুইনের প্রতিরক্ষা ঘাঁটির ওপর। দুপুরের পর থেকে দখলদার বাহিনীর আক্রমণ তীব্রতর হয়। শত্রু অল্পক্ষণের মধ্যেই পশ্চিম ও উত্তর দিক থেকে দরুইনে প্রতিরক্ষা ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এ রকম অবস্থায় আবারো পুনঃমোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সৈনিকেরা নতুন অবস্থানে যাওয়া শুরু করলে তিনি সকলকে স্থান ত্যাগ করে দ্রুত চলে যেতে বলেন এবং কাভার ফায়ারিং এর জন্য নিজে পরিখার ভেতর দাঁড়িয়ে থেকে হালকা মেশিনগান দিয়ে ক্রমাগত গুলি চালাতে থাকেন। সকলে তাঁকে দৌড়ে চলে আসার জন্য অনুরোধ জানালেও তিনি তাঁর অবস্থান থেকে সরেননি। এভাবেই শত্রু দ্বারা ঘেরাও হয়েও আত্মসমর্পণ না করে জীবন বাজি রেখে তিনি প্লাটুনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সহায়তা করেন। একসময় শত্রুর গুলিতে ঝাঝরা হন মোস্তফা কামাল। তিনি তাঁর নিজ পরিখায় ঢলে পড়েন। অতঃপর, ঐ গ্রামেই তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর মৃত্যুর সময় একমাত্র ছেলের বয়স ছিল মাত্র দেড় মাস। তাঁর নির্ভীক আত্মদানের কারণে অন্যান্য সিপাহীরা নিরাপদে অন্য অবস্থানে সরে যেতে সক্ষম হয়। এই অতুলনীয় বীরত্ব ও আত্মোৎসর্গের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা “বীরশ্রেষ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করে।

এই দিনে জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করছে সেই মহান বীরকে, যিনি স্বাধীনতার সূর্য উদিত করার পথে নিজেকে করেছেন উৎসর্গ। তাঁর স্মৃতি এই স্বাধীন দেশের অনুপ্রেরণা হয়ে আমাদের অন্তরে চিরজাগরুক থাকবে।

May 2025
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31