• ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৮ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির কেন্দ্র হয়ে ওঠার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত অক্টোবর ৩, ২০১৯
ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির কেন্দ্র হয়ে ওঠার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াদিল্লির হোটেল তাজ প্যালেসের দরবার হলে ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিনিয়োগ সম্ভাবনা, বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন নিয়েও কথা বলেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্ব এশিয়া, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমে চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যবর্তী হওয়ায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এবং ভারতের ব্যবসার অন্যতম ক্ষেত্র হতে পারে।

“আমরা এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক হাব হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারি। আমাদের নিজস্ব ১৬ কোটি জনগণ ছাড়াও প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের একটি বিশাল বাজারের যোগাযোগের পথ হতে পারে বাংলাদেশ।”

সামাজিক মূল্যবোধ এবং জনগণের আস্থাই বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল শক্তি বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

“একইসঙ্গে আমাদের নেতৃত্বের অন্যতম শক্তি হচ্ছে উন্নয়নের প্রতি মানুষের আকাঙ্ক্ষা, তাদের লড়াকু মানসিকতা এবং আত্মবিশ্বাস,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে সকাল সোয়া ৮টায় ঢাকা থেকে রওনা হয়ে ৯টা ৫০ মিনিটে দিল্লির পালাম বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছান বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেন ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত এবং শোষণহীন সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার সেই লক্ষ্যই আমাদেরকে ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “গত বছর আমরা কোরিয়াতে ১২টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট রপ্তানি করেছি। বাংলাদেশে তৈরি চারটি জাহাজ ভারতে আসছে। সম্প্রতি রিলায়েন্স বাংলাদেশে তৈরি বিপুল পরিমাণ রেফ্রিজারেটর কিনেছে। বাংলাদেশে ছয় লাখ আইটি ফ্রিল্যান্সারের বিশাল গোষ্ঠি রয়েছে।”

বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গতানুগতিক খাতের বাইরে বাংলাদেশের শিক্ষা, হালকা শিল্প, ইলেকট্রনিক্স, গাড়ি শিল্প, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বিদেশি, বিশেষ করে ভারতের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ করার এখনই সময়।”

বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের দেশের জনসংখ্যার ৪৮ শতাংশই হবে শহুরে। যাদের অধিকাংশই হবে তরুণ, পরিশ্রমী এবং ডিজিটাল ব্যবস্থায় যুক্ত।

তিনি বলেন, “এরইমধ্যে বাংলাদেশের ১১ কোটি মানুষ ইন্টারনেটের আওতায় এসেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ৪১ শতাংশ মানুষ মোবাইল ইন্টারনেটের আওতায় আসবে।”

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “অনেক দেশের মতো আমাদেরও অনেক চ্যালেঞ্জ আছে কিন্তু আমরা জানি কিভাবে চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে পরিণত করতে হয়। এ বছর আমরা রেকর্ড ৮ দশমিক এক শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। আমরা দুই সংখ্যার কাছাকাছি রয়েছি। ২০০৯ সালের পর বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ১৮৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলারের কাছাকাছি।

“কৃষি স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি আমরা এখন ধান উৎপাদনে বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ দেশ, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, আম উৎপাদনে চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে পঞ্চম এবং মৎস্য উৎপাদনে চতুর্থ। বিভিন্ন শস্য ও ফলের জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে এ খাতে আমরা আরও এগিয়ে যাচ্ছি।”

শেখ হাসিনা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অর্জনের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হওয়ার পথে ২০০৯ সালের পর তৃণমূলের শতাভাগ মানুষের কাছে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছানো হয়েছে।

“সাধারণ মানুষ যাতে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে সে ধরনের প্রযুক্ত সেবা দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। এরই ফল হিসেবে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশেই রয়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী পঞ্চম বৃহৎ জনগোষ্ঠি। আমরা দ্রুত ক্যাশবিহীন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। গত বছর ই-কমার্স খাতে আমাদের লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি ডলারের কাছাকাছি।”

দক্ষিণ এশিয়ায় এ মুহূর্তে বাংলাদেশ উদার বিনিয়োগের অন্যতম ক্ষেত্র বলে উল্লখ করেন শেখ হাসিনা।

বিদেশি বিনিয়োগের আইনি সুরক্ষা, বছরে বড় ধরনের প্রণোদনা, যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কছাড়, সহজে ব্যবসা ছাড়া, পুরো মুনাফা এবং মূলধন বিদেশে নেওয়ার সুবিধা দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা তৈরির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে ১২টি অর্থনৈতিক এলাকায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য রয়েছে দুইটি অর্থনৈতিক এলাকা। এছাড়া বেশ কয়েকটি হাই টেক পার্কও প্রস্তুত হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুন্দর পরিবেশ রয়েছে।

পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেসসচিব হাসান জাহিদ তুষার বলেন, “বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের নেতারা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভূতপূর্ব নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।

“তারা বলেছেন, বাংলাদেশে অভূতপূর্বভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।”

বাংলাদেশে নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে দৃষ্টান্ত হিসাবে উল্লেখ করেন তারা।

ভারতীয় বিনোয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান।

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031