• ১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২২শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

রাজনীতিবিদদের আশ্রয়ে একদল দুর্বৃত্ত জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে: বিআইপির সম্মেলনে জামায়াত আমীর

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত মে ১২, ২০২৫
রাজনীতিবিদদের আশ্রয়ে একদল দুর্বৃত্ত জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে: বিআইপির সম্মেলনে জামায়াত আমীর

বিআইপির নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ২য় দিন

রাজনীতিবিদদের আশ্রয়ে একদল দুর্বৃত্ত জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে: বিআইপির সম্মেলনে জামায়াত আমীর

রাজনীতিবিদদের আশ্রয়ে একদল দুর্বৃত্ত জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, “তারা শুধু ধ্বংস করে না, তারা শেল্টার পায়। এসমস্ত ধ্বংসযজ্ঞ যারা চালায় ঐসমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তার অংশ। এজন্য ঐ রাজনৈতিক নেতার কোনো নৈতিক অধিকার থাকে না তাকে শাসন করার।”

রবিবার সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাবিষয়ক ৪র্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন রবিবারে “পরিকল্পিত বাংলাদেশ এবং নগর, অঞ্চল ও গ্রামীণ এলাকার বৈষম্যহীন উন্নয়ন: রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আগামীর পথনকশা” শীর্ষক রাউন্ড টেবিল বৈঠকে তিনি একথা বলেন।

জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “দেশটি আমাদের ছোট কিন্তু জনসংখ্যা অনেক বেশি। তবে এই েই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ আমরা রক্ষা করতে পারিনি। আমাদের নদীগুলোতে এখন ধান চাষ হয়। সবই কি ভারত থেকে আসা পলিমাটির দোষ? আমাদের নদীগুলো আমাদের শরীরের ধমনী, শিরার মতো। আমরা নদীগুলোকে ধ্বংস করে ফেলছি। পানিতে যে মাছ গ্রো করতো সেগুলো এখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিকভাবে উন্নয়ন করে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসে আমরা মেতে আছি।”

জামায়াত আমীর নগর পরিকল্পনাবিদদের রাষ্ট্রের পরিকল্পনায় যুক্ত করার আহবান জানিয়ে বলেন, “পরিকল্পনাবিদদের রাষ্ট্রের কোনো পরিকল্পনায় জায়গা দেওয়া হয়নি। তাহলে দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন পড়ানো হয়? আমাদের যদি আল্লাহ কখনও ক্ষমতার সাথে থাকার সুযোগ দেয় কথা দিচ্ছি পরিকল্পনাবিদদের আমরা ফ্যাসিলেটেড করবো।”

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “৫৪ বছরে আমরা দেখেছি এদেশের নাগরিকরাও দেশকে ধারণ করতো না। কারন নাগরিকদের যে রাষ্ট্রের প্রতি এবং সরকারের যে নাগরিকদের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে সেটা প্রয়োগ হয়নি। আর অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাষ্ট্রের সম্পদ। আমাদের পার্টি হচ্ছে সলিউশন বেইজড রাজনীতি। আমরা চাই জনগন তার অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানুক।”

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না শহর কিংবা গ্রামের উন্নয়নে পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনাবিদদের সমন্বয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “আমরা একটি ঐতিহাসিক পর্বে আছি। দেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা হচ্ছে। দুনিয়াও একটি ট্রানজিশন পিরিয়ডে আছে। তাই আমাদের পরিকল্পনাও হতে হবে সবকিছুর সাথে তালমিলিয়ে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি এগোতে না পারি তাহলে মুখ থুবড়ে পড়তে হবে। এর জন্য আমাদের রাজনৈতিক গুরুত্ব যেমন রয়েছে, তেমনি মানুষ ও প্রাণ প্রকৃতি নিয়ে পরিকল্পনায় গুরুত্ব দিতে হবে। প্রকৃতি, পরিবেশ সীমানা দিয়ে ভাঙা যায় না। বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চিই যদি পরিকল্পনার মধ্যে না আসে তাহলে আমরা আরও ক্ষতির সম্মুখীন হবো। আমরা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে এই সরকারকে বসিয়েছিলাম কিন্তু আমরা দেখেছি ভালো কাজকে দূরে ঠেলে ধান্ধাবাজদের কাছে টেনে নিতে। যা এই আমলাতন্ত্রের মাধ্যমেই দেখেছি।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, “বাংলাদেশকে পরিকল্পিত  তিনটি দিক থেকে পরিবর্তন দরকার। এক হচ্ছে দল, দ্বিতীয় রাষ্ট্র এবং তৃতীয় হচ্ছে ব্যক্তি কি করতে পারেন। আমাদের জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। নিজের এলাকার বাহিরে চিন্তা করতে চান না। যা অপরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য অন্যতম দায়ী।”

তিনি আরও বলেন, “গত ১৫ বছরে যারা সবচেয়ে বেশি পরিবেশের ক্ষতি করেছেন তাদেরকে এওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে পরিবেশ ধ্বংসকারীকে মেয়র করা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কেউ পরিবেশের ক্ষতি করলে তাকে দলীয় পদ থেকে বাদ দিতে হবে। যারা পরিবেশের ক্ষতি করবে তাদেরকে যেন নমিনেশন দেওয়া না হয়। নির্বাচন কমিশনকেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

“রাষ্ট্রের পরিকল্পনায় মানুষের সাথে যেন প্রতিটি প্রাণ প্রকৃতি সম্পৃক্ত করা হয়। রংপুরের মানুষ ঢাকার প্রার্থী হতে পারলে রংপুরের ভোটার কেন ঢাকায় ভোট দিতে পারবে না? যারা কর্মস্থলে থাকে তারা অনেকেই ভোট দিতে পারে না। যে যেখানে থাকবে সেখানে বসেই ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে,” যুক্ত করেন তিনি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “বিশাল জনশক্তি এবং মিঠা পানি ও উর্বর মাটি আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। কিন্তু আমরা সব ধ্বংস করেছি। ঢাকা শহর এখন একটি বিষাক্ত নগরী। পরিকল্পিতভাবে দেশের নদীগুলোকে গলা চেপে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকা শহরে যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে আগামী ২-৩ দশক পরে ঢাকায় বাস যোগ্যতা থাকবে কিনা সন্দেহ। এর সমাধান একটাই সেটা হচ্ছে বিকেন্দ্রীকরণ। বাংলাদেশের অসংখ্য প্রকল্প হয়েছে কোনো জবাবদিহিতা ছাড়া, পরিকল্পনা ছাড়া।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম বলেন, “ইসলাম একটি কম্প্লিটনেসের নাম। ইসলামেই বলা আছে যে, তুমি যখন কোনো বাড়ি করো তখন যেন তোমার পাশের বাড়িতে সূর্যের আলো প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি না করে। প্লানিং বাস্তবায়নের জন্য যেমন প্লানার প্রয়োজন তেমনি জনগনকেও সচেতন করতে হবে। আমাদের দেশে উন্নয়নের জন্য বাজেট হয় কিন্তু পরিকল্পনা করে কাজ হয় না।”

বিআইপির সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “রাজনৈতিক ব্যক্তিরা মানুষের কথা বলে, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মহানগর সবার কথা বলে। আমরা পরিকল্পনাবিদরাও মানুষ ও পরিবেশ নিয়ে বসবাসযোগ্য নগর, অঞ্চল এবং গ্রামীণ এলাকার বৈষম্যহীন উন্নয়নের জন্য কাজ করি।”

বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, “আমরা বিগত দিনে যে মডেলের উন্নয়ন করেছি তার উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে বসবাসের প্রায় অযোগ্য এই ঢাকা শহর। জুলাই আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো রিফর্ম। আমরাও চাই বাংলাদেশের নগর, অঞ্চল ও গ্রামীণ এলাকার পরিকল্পনায় সরকার গুরুত্ব দিক।”

শনিবার (১০ মে) থেকে শুরু হওয়া বিআইপির নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাবিষয়ক ৪র্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলন সোমবারে শেষ হবে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে “নগর, অঞ্চল এবং গ্রামীণ এলাকার বৈষম্যহীন উন্নয়নে স্থানিক (Spatial) পরিকল্পনা।”

June 2025
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930