• ২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৬শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী : একজন অকুতোভয় দেশপ্রেমিক

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত জুলাই ১০, ২০১৯
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী : একজন অকুতোভয় দেশপ্রেমিক

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী

আজ ১০ জুলাই। স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে হারানোর দিন। ১৮ বছর আগে ২০০১ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। স্বজন-সুহৃদ সবার কাছে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর প্রয়াণ দিবসটি শোকের আর বেদনার।

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক, সজ্জন ব্যক্তি। দায়িত্ববোধের কাছে তিনি ছিলেন অকুতোভয়। একাধারে ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের একজন সফল স্পিকার, একজন সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ছিলেন ঝানু একজন কূটনীতিক। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১৯৮৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
মরহুম স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ছিলেন মূলত একজন পেশাদার কূটনীতিবিদ। তিনি ১৯২৮ সালের ১১ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুর রশীদ চৌধুরী এবং মাতা সিরাজুন্নেসা চৌধুরী। তারা দুজনেই ছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ। জনকল্যাণমুখী রাজনীতি ছিল তাদের মর্মমূলে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালনকারী এই দম্পতির মতো হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর জীবনের পুরোটাই সাফল্যে ভরপুর।

তুখোড় মেধাবী হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করেন। অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে পাকিস্তানি দূতাবাসে কর্মরত বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবন রক্ষা করেন। একই সঙ্গে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার পর ভারতীয় লোকসভায় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী বক্তৃতা করার সৌভাগ্য অর্জন করেন।

স্বাধীনতার পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সরকারি কর্মচারীদের দুই বছরের জ্যেষ্ঠতা প্রদান করেন। সে হিসেবে মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৫১ ব্যাচের ফরেন সার্ভিসের কর্মকর্তা হিসেবে জ্যেষ্ঠতা পান। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশে তিনি রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে তার দুই কন্যাকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি দায়িত্ব হিসেবে দেখেছেন। এ প্রসঙ্গে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর বক্তব্য ছিল— ‘আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়েদের আশ্রয় দিয়েছি। এটা আমার কর্তব্য। এর জন্য আমি ভীত নই। বিপদেই তো মানুষ মানুষকে সাহায্য করে। এটাই তো মানবিকতা।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, তখন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছিলেন বেলজিয়ামে। দেশে না থাকায় বেঁচে যান তারা। তবে দেশের বাইরেও জীবন সংশয় ছিল। বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হক শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। সে সময় হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়েকে জার্মানিতে (তখনকার পশ্চিম জার্মানি) আশ্রয় দেন।

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৭৫ সালে জার্মানির রাষ্ট্রদূত ছিলেন। শুধু তাই নয়, তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থাও করেন তিনি।

শেখ হাসিনা ও রেহানাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ওপর ক্ষিপ্ত হয় বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। ঘাতকেরা হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রদূত থেকে প্রত্যাহার করে দেশে এনে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল; কিন্তু ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশের পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পান হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। পরে তাকে ওএসডি করে দেশে নিয়ে আসা হয়। তিনি ১১ মাস ওএসডি ছিলেন।

অনেকটা বিরূপ পরিস্থিতিতে ব্রাসেলস থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে চলে যেতে হয়। তবে সেখানে মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এবং তার সহধর্মিণী বেগম মাহজাবীন চৌধুরী তাদেরকে অত্যন্ত সহৃদয় আতিথেয়তা প্রদর্শন করেন। এবং মূলত সেই দুঃসময়ে তাদেরকে আশ্রয় দান করেন। সেই চরম দুঃসময়ে মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী বেগম মাহজাবীন চৌধুরী অপত্যস্নেহে দুই বোনকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, যেটা সারাজীবন প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের ছোট আপা শেখ রেহানা তা স্মরণ রেখেছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘হাসিনা : এ ডটার্স টেইল’ -এ সেই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।

মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার অনুরোধে সরাসরি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সিলেট-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।

বিএনপির সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম সাইফুর রহমানকে তিনি পরাজিত করেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারেন— এমন গুঞ্জন ছিল; কিন্তু সিলেটের আরেক বরেণ্য নেতা মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব প্রদান করেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধাবোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৯৬ সালে যখন মহান জাতীয় সংসদের স্পিকার হলেন, তখন আমি তার একান্ত সচিব বা প্রাইভেট সেক্রেটারির দায়িত্ব পালনের সুযোগ লাভ করি। মহান জাতীয় সংসদের সংস্কার এবং বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস খুব কাছ থেকে আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। জাতীয় সংসদকে আধুনিকায়ন করা এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংসদকে ব্রিটেনের পার্লামেন্টের আদলেই সুসজ্জিত করা হয়।

সংসদ নেতা শেখ হাসিনার চিন্তাধারা, দিকদর্শন ও বিশেষ উদ্যোগ ছিল প্রণিধানযোগ্য। এজন্য সংসদীয় কমিটিতে সংস্কার আনা হয়। আগে সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রীরা সভাপতি থাকায় জবাবদিহিতা সীমাবদ্ধ ছিল। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে জাতীয় সংসদের জবাবদিহিতা আরও বেড়েছে। সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রীদের পরিবর্তে অভিজ্ঞ সংসদ সদস্যদের কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়। মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে পেশাদারিত্ব বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। নতুন নতুন কর্মকর্তাদের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ করেন এবং তারাই পরে প্রশিক্ষিত হয়ে বিভিন্ন উইংয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।

মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ডেপুটি স্পিকারের পদকে খুবই সম্মানিত করেন। কারণ পার্লামেন্টের ইতিহাসে স্পিকারই হচ্ছেন সবকিছু, ডেপুটি স্পিকার অনেক সময় আড়ালে থাকতেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী তার সহকর্মী ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদকে প্রায়শই সংসদ পরিচালনার দায়িত্ব দিতেন এবং তাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ দিতেন। তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার এবং বর্তমানে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদ সর্বদা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন সহকর্মী স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে। সংসদ পরিচালনার শুরুতে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্পিকারের দায়িত্ব পালনকালে জাতীয় সংসদের একটি উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তৈরি হয়।

তিনি সংসদ নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তায় ডিজিটাল সংসদ প্রতিষ্ঠা করেন। সংসদ লাইব্রেরির উন্নয়নে সেখানে ইন্টারনেট চালু ও ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ সংসদের লাইব্রেরিকে যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের সঙ্গে সংযুক্ত করেন। ১৯৯৬ সালে যারা প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের জন্য ওরিয়েন্টেশন কোর্সের ব্যবস্থা করেন। এ কোর্সের কল্যাণে বাংলাদেশের পার্লামেন্টে বেশকিছু অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল সংসদ সদস্য বেরিয়ে আসেন।

বর্তমান আমলে পার্লামেন্টারি ডিপ্লোমেসি বলে একটা ধারণা আছে, যার আওতায় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) সারা পৃথিবীর সব পার্লামেন্টকে নিয়ে। কমনওয়েলথ দেশগুলোর পার্লামেন্টকে নিয়ে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিইউ)। মরহুম স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সিপিএ ও আইপিইউতে ঘনিষ্ঠভাবে অংশগ্রহণ করতেন। বিদেশ সফরে মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী পার্লামেন্টে যারা নবাগত, তাদের অগ্রাধিকার দিতেন। মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী বলতেন, ‘সুযোগ পেলেই তাদেরকে বিমানে চড়াও। বিদেশে নিয়ে যাও। ফিরে এলে দেখবা যে তারা পরিবর্তিত মানুষ, আধুনিকমনস্ক মানুষ।’

আমি যখন পিএসের দায়িত্ব নিলাম, তখন মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী বলেছিলেন, দেখবে কার্যোপদেষ্টার কমিটিতে পার্লামেন্টারি বিষয়ে যত কঠিন প্রশ্ন উত্থাপিত হবে, সেগুলো নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন— সেগুলোর কিন্তু সহজ সমাধান আসবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনার কাছ থেকে। আমি আজ পর্যন্ত সেটা দেখছি এবং এবার দেখলাম যে বাজেট অধিবেশনে মাননীয় অর্থমন্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাদের সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীর পক্ষে বাজেট উপস্থাপন করলেন।

মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ২০০১ সালের ১০ জুলাই স্পিকারের দায়িত্ব পালনকালে ইন্তেকাল করেন এবং মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি ইহজীবন ত্যাগ করেন। তার মৃত্যু সংবাদ পৌঁছে যায় দেশে-বিদেশে, সবাই ব্যথিত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিভাবকতুল্য স্পিকারকে হারিয়ে ব্যথিত হন। শোকের এই দিনে আমরা মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর মতো অকুতোভয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার শিক্ষা নিতে পারি। একই সঙ্গে তার আদর্শে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে পারি।

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুম স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত করেন। মরহুমের পক্ষে সহধর্মিণী বেগম মাহজাবিন চৌধুরী পদক গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা বিশেষভাবে গিয়েছিলেন সেখানে এই পুরস্কারের মুহূর্তটি হৃদয় দিয়ে অনুভব করার জন্য। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে সর্বদা উজ্জ্বল অমর হয়ে থাকবেন স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী।

লেখক : নজিবুর রহমান

স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর একান্ত সচিব ও সভাপতি, স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

March 2025
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031