আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন আমাদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।আমাদের প্রতি তাঁর দয়া অপরিসীম।আমাদের দুনিয়ার জিন্দেগী খুবই অল্প দিনের।এই অল্প সময়ে অল্প আ’মলের মাধ্যমে আমরা যাতে প্রচুর সওয়াব অর্জন করে জান্নাত উপযোগী হতে পারি সে জন্য আল্লাহ তাঁর রাসূলের (সা) মাধ্যমে বহু আ’মল দেখিয়ে দিয়েছেন।এমন এগারোটি আ’মল রয়েছে যার মাধ্যমে তাহাজ্জুদ আদায় না করেও তাহাজ্জুদ আদায়ের সওয়াব অর্জন করতে পারি।
(১) সালাতুল এশা ও ফজর জামায়াতে আদায়।
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ شَهِدَ العِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ كَانَ لَهُ قِيَامُ نِصْفِ لَيلَةٍ، وَمَنْ صَلَّى العِشَاءَ وَالفَجْرَ فِي جَمَاعَةٍ، كَانَ لَهُ كَقِيَامِ لَيْلَةٍ-
উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃযে ব্যক্তি এশার নামায জামা’আতের সাথে আদায় করে তার জন্য অর্ধরাত (নফল) নামায আদায়ের সাওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি ‘ইশা ও ফযরের নামায জামা’আতের সাথে আদায় করে তার জন্য সারারাত (নফল) নামায আদায়ের সমপরিমাণ সাওয়াব রয়েছে।
[মুসলিম-৬৫৬,আবু দাঊদ-৫৫৫,তিরমিযী-২২১)]
.
(২) যোহরের চার রাকা’আত সুন্নাত।
قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم من صلى قبل الظهر اربع رکعات کانما تهجد بهن من ليلة-
রাসূল (সা) বলেছেন যে ব্যক্তি যোহরের চার রাকা’আত সুন্নাত আদায় করবে সে তাহাজ্জুদের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।
[ইবনে শায়বা]
.
(৩) তারাবিহর সালাত শেষ পর্যন্ত আদায়।
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَال قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّهُ مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ فَإِنَّهُ يَعْدِلُ قِيَامَ لَيْلَةٍ-
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন
যে ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাত পড়ে ফিরে আসে সে সারারাত সালাত পড়ার সমান নেকী পায়।
[তিরমিযী-৮০৬,ইবনে মাজাহ-১৩২৭,আবু দাঊদ-১৩৭৫]
.
(৪) রাতের বেলা কুরআনের যে কোন একশ আয়াত পাঠ করা।
مَنْ قَرَأَ مِائَةَ آيَةٍ فِي لَيْلَةٍ، كُتِبَ لَهُ قُنُوتُ لَيْلَةٍ.[ السلسلة الصحيحة للألباني]
.
(৫) রাতে সূরা বাকার শেষ দু’টি অায়াত পাঠ।
عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَنْ قَرَأَ بِالْآيَتَيْنِ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ فِيْ لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ.
আবূ মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কেউ যদি রাতে সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত পাঠ করে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট।
[বুখারী-৫০০৯,মুসলিম-২৭১৪]
.
(৬) উত্তম আচরণ।
عَنْ عَائِشَةَ، رَحِمَهَا اللَّهُ قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِهِ دَرَجَةَ الصَّائِمِ الْقَائِمِ ” .
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভাল চরিত্রের মাধ্যমে (দিনের) সাওম পালনকারী ও (রাতের) তাহাজ্জুদগুজারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে।
[আবু দাঊদ-৪৭৯৭]
.
(৭) বিধবা ও অসহায়ের খেদমত।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم السَّاعِي عَلٰى الأَرْمَلَةِ وَالْمِسْكِينِ كَالْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللهِ أَوِ الْقَائِمِ اللَّيْلَ الصَّائِمِ النَّهَارَ.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিধবা ও মিসকীন-এর জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টরত ব্যক্তি আল্লাহ্র রাস্তায় মুজাহিদের মত অথবা রাতে সালাতে দণ্ডায়মান ও দিনে সিয়ামকারীর মত।
[বুখারী-৫৩৫৩,মুসলিম-২৯৮২]
.
(৮) জুম’আর সুন্নাহ ও মুস্তাহাব পালন।
أَوْسُ بْنُ أَوْسٍ الثَّقَفِيُّ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ مَنْ غَسَّلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاغْتَسَلَ ثُمَّ بَكَّرَ وَابْتَكَرَ وَمَشَى وَلَمْ يَرْكَبْ وَدَنَا مِنَ الإِمَامِ فَاسْتَمَعَ وَلَمْ يَلْغُ كَانَ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ عَمَلُ سَنَةٍ أَجْرُ صِيَامِهَا وَقِيَامِهَا ” .
আওস ইবনু আওস আস-সাক্বাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমু’আহ্র দিন গোসল করবে এবং (স্ত্রীকেও) গোসল করাবে, প্রত্যুষে ঘুম থেকে জাগবে এবং জাগাবে, জুমু’আহ্র জন্য বাহনে চড়ে নয় বরং পায়ে হেঁটে মাসজিদে যাবে এবং কোনরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের নিকটে বসে খুতবা শুনবে, তার (মাসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর যাবত সিয়াম পালন ও রাতভর সলাত আদায়ের (সমান) সাওয়াব পাবে।
[আবু দাউদ-৩৪৫,তিরমিযী-৪৯৬,ইবনে মাজাহ-১০৮৭]
.
(৯) আল্লাহর রাস্তায় রাত জেগে পাহারা।
عَنْ سَلْمَانَ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ رِبَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَيْرٌ مِنْ صِيَامِ شَهْرٍ وَقِيَامِهِ وَإِنْ مَاتَ جَرَى عَلَيْهِ عَمَلُهُ الَّذِي كَانَ يَعْمَلُهُ وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ وَأَمِنَ الْفَتَّانَ ” .
সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, একটি দিবস ও একটি রাতের সীমান্ত প্রহরা একমাস সিয়াম পালন এবং ইবাদতে রাত জাগার চাইতেও উত্তম। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাতে তার এ আমলের সাওয়াব জারী থাকবে। এবং তার (শহীদসুলভ) রিযিক অব্যাহত রাখা হবে এবং সে ব্যক্তি ফিৎনাবাজদের থেকে নিরাপদে থাকবে।
[মুসলিম-৪৮৩২]
.
(১০) ক্বিয়ামুল লাইলের নিয়্যতে ঘুমানো:-
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ “ مَنْ أَتَى فِرَاشَهُ وَهُوَ يَنْوِي أَنْ يَقُومَ فَيُصَلِّيَ مِنَ اللَّيْلِ فَغَلَبَتْهُ عَيْنُهُ حَتَّى يُصْبِحَ – كُتِبَ لَهُ مَا نَوَى وَكَانَ نَوْمُهُ صَدَقَةً عَلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ ” .
আবূদ-দারদা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি (ঘুমাতে) তার বিছানায় এসে রাতে উঠে সলাত পড়ার নিয়ত করলো, কিন্তু ঘুমের আধিক্যের কারণে তার ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো, তাকে তার নিয়ত অনুযায়ী নেকী দেয়া হবে। তার এ ঘুম তার প্রভুর পক্ষ থেকে তার জন্য দান-খয়রাত হিসাবে গণ্য।
[ইবনে মাজাহ-১৩৪৪]
.
(১১) যে উপরের আমলসমূহ অপরের সাথে শেয়ার করবে।
عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الأَنْصَارِيِّ،قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ ” .
আবূ মাসা‘উদ আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজের পথ দেখায়, সে উক্ত কাজ সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব পায়।
[মুসলিম-৪৭৯৩,তিরমিযী-২৬৭১,আবু দাঊদ-৫১২৯,আহমদ-২৭৫৮৪]
আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে উপরের আ’মল সব এখলাসের সহিত বাস্তবায়ন করার তাওফিক দিন।
লেখক: সাজিদ মাহমুদ, শিক্ষার্থী, সিলেট ল কলেজ।