১৯৩০ সালের মহামন্দা গ্রেট ডিপ্রেশন, আর ২০২০ সালে করোনা, পর্ব ১
১৯৩০ সালের মহামন্দা গ্রেট ডিপ্রেশন, আর ২০২০ সালে করোনা, পর্ব ১
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০
পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দা সংগঠিত হয়েছিল ১৯২৯ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ এক দশকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে নেমেছিল ভয়াবহ ধ্বস, যার প্রভাব পড়েছিল আমেরিকানদের ব্যক্তিগত জীবনে। সময়ের তোড়ে আমেরিকা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ও ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়েছিল এর প্রভাব। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে প্রায় এক দশকের মধ্যে এক বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সােভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়া প্রায় সকল দেশে দেখা দেয়। এই মন্দা সর্বপ্রথম আমেরিকায় দেখা দেয়। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ২৪ অক্টোবর মার্কিন শেয়ার বাজারে অকস্মাৎ ধ্বস নামে এবং ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ার মার্কেটে হাহাকার দেখা দেয়। মার্কিন ব্যাঙ্কগুলি শেয়ার বাজারে বহু টাকা লগ্নি করেছিল। ফলে ব্যাঙ্কগুলিও দরজা বন্ধ করে। দুমাসের মধ্যে মার্কিন বিনিয়াগকারীরা ৪০, ০০০ মিলিয়ন ডলার হারায় এবং ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় আমানতকারী জনগণ সর্বস্বান্ত হয়, যা ছিল ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ এরিক হবসবম এর মতে, ‘The largest global earthquake ever to be measured on economic historians Richter Scale.” “এইরূপ অর্থনৈতিক বিপর্যয় আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল এবং ইউরোপীয় ব্যবস্থার ভাঙনের জন্য অনেকাংশে দায়ী ছিল।“
এই মন্দায় যুক্তরাষ্ট্রের সকল স্থানীয় এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নানারকম সমস্যা তৈরি হয়। কোটি কোটি আমেরিকান বেকার হয়ে পড়েন। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা মেক্সিকান শরণার্থীদের একাংশ নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হন। শুধু এই সমস্যাগুলোর মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না এর প্রভাব! তৎকালীন মার্কিন রাজনৈতিক আবহাওয়াও পাল্টে দেয় এটি। ব্যর্থতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে রিপাবলিকানরা বিদায় নেন এবং ডেমোক্রেটরা গদিতে বসে এই অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে কাজে নেমে পড়েন।
স্বাধীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বিষহ স্মৃতি বহন করা সেই সময়কে ইতিহাসে গ্রেট ডিপ্রেশন কিংবা অর্থনৈতিক মহামন্দা বলা হয়। আর আজকের এই লেখায় গ্রেট ডিপ্রেশনের কারণ, ক্ষয়ক্ষতি এবং সেই সময়কার মেক্সিকান বংশোদ্ভূত মার্কিনিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অন্যায় আচরণের চিত্র তুলে ধরা হলো।
গ্রেট ডিপ্রেশন বা অর্থনৈতিক মহামন্দা
১৯২০ সালের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। তখন দেশটির অর্থনীতি দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। উল্লেখযোগ্য বড় শহরগুলোতে গড়ে ওঠে ব্যক্তিগত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং বড় কলকারখানা। একই সময় মার্কিন প্রশাসন কৃষি ও রেলখাতেও উন্নয়নের কাজ শুরু করেছিল। যার ফলে লক্ষ লক্ষ নাগরিকের স্থায়ী কর্মসংস্থান তৈরি হয় এবং তারা উল্লেখযোগ্য হারে আয় করতে থাকেন। কয়েকবছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত অবস্থা আরো পাল্টে যায়। নতুন নতুন কলকারখানার সঙ্গে তৈরি হয় উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা, কর্পোরেট অফিস এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কর্মসংস্থানের অভাব না থাকায় প্রায় সকল নাগরিকের হাতেই প্রচুর অর্থ ছিল। আর এই কারণেই তারা শেয়ার বাজারের দিকে ঝুঁকে পড়েন। কেউ কেউ তো নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে স্থায়ী বিনিয়োগকারীও হয়ে ওঠেন। আর এর সংখ্যা দিন দিন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সেই সময় একজন বাবুর্চি হতে শুরু করে একজন কারখানার মালিক- প্রায় সবাই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতেন! নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনে হাজার মানুষের ভিড় ছিল নিত্যদিনের চিত্র।
১৯২৯ সালের আগস্টে এসে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার চরম শিখরে আরোহন করে। কিন্তু ততদিনে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াও উপলব্ধি করতে থাকে সবাই। ঐ বছরের গ্রীষ্মে দেশটির জাতীয় উৎপাদন হ্রাস পেতে থাকে এবং মার্কিন নাগরিকরা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের দিকে মনোনিবেশ করায় কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। তখন একদল নাগরিক, ব্যবসায়ের নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেগুলো শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন। এতে করে স্থানীয় ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে, যা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় তৎকালীন সরকার। সব মিলিয়ে এক ধরনের অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে। কিন্তু এত শত সমস্যার মাঝে একদিনের জন্যেও শেয়ারের দাম কমেনি! অতঃপর ১৯২৯ সালের অক্টোবরের শেষদিকে ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কিছু সংখ্যক ভীতু বিনিয়োগকারী সেই সময় তাদের সব শেয়ার বিক্রি করতে থাকেন। আর তাদের মদদ দিচ্ছিলেন কিছু সংখ্যক অসাধু বিনিয়োগকারী।
শুধুমাত্র ২৪ অক্টোবর একদিনে বিক্রি হয়েছিলো প্রায় ১২.৯ মিলিয়ন শেয়ার! আর এটিকে একটি সুযোগ ভেবে লক্ষ লক্ষ লোক ব্যাংক থেকে ঋণ করে শেয়ার ক্রয় করেন। গ্রেট ডিপ্রেশনের ইতিহাসে সেদিনকে ‘কালো বৃহস্পতিবার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মূলত সেদিনই অর্থনৈতিক মহামন্দার দিকে প্রথম পা ফেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এর চার দিন পর ২৯ অক্টোবর নিউইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি খায়। সেদিন প্রায় ১৬ মিলিয়ন শেয়ার বিক্রি হয়েছিল। মূলত বিপর্যয় বুঝতে পেরে, একটি মহল চারদিন আগে ক্রয় করা শেয়ারগুলো বিক্রি করতে থাকে। কিন্তু মধ্যম ও নিম্ন পর্যায়ের শেয়ারগ্রহীতারা সেটি বুঝতে না পেরে, কম দামে পাওয়ার লোভে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেসব শেয়ার কেনেন। আর এরই মাঝে শুরু হয় দরপতন। হাহাকার নেমে আসে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে। ইতিহাসে ঐ দিনটিকে ‘কালো মঙ্গলবার’ হিসেবে উল্লেখ করেন অর্থনীতিবিদরা।
ছবিঃ স্টক মার্কেট ক্র্যাশের পর ওয়াল স্ট্রীট-এ দিশেহারা মানুষের ভীড়, ১৯২৯ সাল
মহামন্দার দুটি ধ্রুপদী তত্ত্ব হল কেইনেসীয় (চাহিদা চালিত) এবং অর্থ-কেন্দ্রিক ব্যাখ্যা। চাহিদা চালিত তত্ত্বে বলা হয় বাজারের উপর আস্থা হারানোর ফলে ভোগের পরিমাণ ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত ব্যয় কমে যায়। একবার মূল্যহ্রাস পাওয়ার ফলে অনেক মানুষ ধারণা করে নতুন করে বাজারে বিনিয়োগ না করে তারা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। টাকা বিনিয়োগ না করায় মূল্যহ্রাস পেলে তারা লাভবান হয় এবং চাহিদা কমায় স্বল্পমূল্যে অধিক পণ্য ক্রয় করতে পারে। অর্থ-কেন্দ্রিক ব্যাখ্যাকারীরা মনে করেন মহামন্দা সাধারন দরপতন হিসেবে শুরু হয় কিন্তু অর্থ সরবরাহ সঙ্কুচিত হতে থাকলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে থাকে এবং এই সাধারন দরপতন মহামন্দার রূপ ধারণ করে।
অর্থনীতিবিদ ও অর্থনৈতিক ইতিহাসবেত্তাগণ সমানভাবে বিভক্ত এবং তারা মনে করেন প্রথাগত আর্থিক ব্যাখ্যা অনুসারে মহামন্দার প্রাথমিক কারণ আর্থিক খাতের সাথে সম্পর্কিত, বা প্রথাগত কেইনেসীয় ব্যাখ্যা অনুসারে মহামন্দার প্রাথমিক কারণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যয়, বিশেষ করে বিনিয়োগ সংক্রান্ত ব্যয়ের পতন। বর্তমানে এই বিতর্ক তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় কারণ ঋণ সংকোচন তত্ত্বের কিছু মূলধারার সমর্থন পাওয়া যায় এবং মিল্টন ফ্রিড্ম্যান ও আনা শোয়ার্ট্জ এর আর্থিক ব্যাখ্যার ভিত্তিতে তৈরি হাইপোথিসিসে অ-আর্থিক ব্যাখ্যাও যোগ করা হয়েছে।
এই ব্যাপারে মতৈক্য রয়েছে যে ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম এর আর্থিক সংকোচন এবং ব্যাংকিং পতন রোধ করা উচিত ছিল। যদি ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম তা করতে পারত তাহলে মন্দার প্রভাব আরো কম তীব্র এবং স্বল্পস্থায়ী হত।
গ্রেট ডিপ্রেশনের প্রভাব
১৯২৯ সালের অক্টোবরের ঐ দুই দিনে প্রায় ধ্বংস হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার। নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়েন নতুন বিনিয়োগকারীরা। আর এর প্রভাব পড়তে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট-বড় সকল ক্ষেত্রে। কয়েকদিনের মধ্যে শিল্পকারখানার উৎপাদন অর্ধেক হ্রাস পায়। ব্যবসায়ে নিশ্চিত ক্ষতি বুঝতে পেরে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী ছাঁটাই শুরু করে। কোথাও কোথাও গুলিবর্ষণ করে কর্মীদের মেরে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটে। দোকানগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও, ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছিলেন না বিক্রেতারা। মাত্র ১ বছরের মাথায় প্রায় ১ কোটি মার্কিন নাগরিক বেকার হয়ে পড়েন, যা ১৯৩১ সালে গিয়ে দেড় কোটিতে ঠেকে।
রাষ্ট্রপতি হার্বার্ট হুভারের প্রশাসনও এই অবস্থায় দিশেহারা হয়ে যায়। তারা তাদের বেশকিছু বড় প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানেও লক্ষ লক্ষ লোক বেকার হয়ে পড়েন। গোটা যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তা রাস্তায় মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করে। সেই সময় মানুষ অভাবের তাড়নায় নিজেদের ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করতেও ক্রেতা খুঁজতেন। শুধু তাই নয়; অবস্থা এতটাই বেগতিক ছিল, যে কৃষকেরা নিজেদের ফসল সংগ্রহের সামর্থ্যও হারিয়ে ফেলেন! তারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কাজ খুঁজে গোটা দিন পার করতেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মতো দেউলিয়া হয়ে যায় ব্যাংকগুলোও। লোকজন তাদের গচ্ছিত অর্থ ফেরত আনতে কিংবা নতুন করে ঋণ নিতে গেলে তারা তাদের দরজা বন্ধ করে দিতো। ১৯৩৩ সালে প্রায় সবগুলো শহরের ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়। আর বেকার নাগরিকদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ মিলিয়নে।
যেখানে ১৯২৯ সালেও ৯০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক শেয়ার বাজারের নিয়মিত বিনিয়োগকারী ছিলেন, সেখানে ১৯৩৩ সালে এসে ১৫ মিলিয়ন নাগরিকের বেকারত্ব এবং ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হওয়ার মতো ঘটনা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। আর এই দুর্দিনে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনেও ব্যাপক পরিবর্তন আসে। (ছবিঃ- শিকাগোর একটি লঙ্গড়খানায় কর্মহীন নাগরিকদের ভীড়)
অর্থনৈতিক মহামন্দার কারণে মার্কিন রাজনীতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ১৯২৯ সালে যখন শেয়ারবাজারে দরপতন হয় এবং ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হতে শুরু করে তখন নেতৃত্বে ছিলেন রাষ্ট্রপতি হার্বার্ট হুভার। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেয়ার পূর্বে হুভার এক সময় মার্কিন বাণিজ্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। যার কারণে প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিশ্বাস ছিল, তিনি দেশকে এই মন্দা পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবে, রিপাবলিকান হুভার মানুষের চিন্তাচেতনাকে মোটেও মূল্যায়ন করেননি! এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি হেঁটেছিলেন উল্টোপথে।
হুভার-প্রশাসন নিঃস্ব হওয়া নাগরিকদের ত্রাণ সহায়তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। মূলত রিপাবলিকানরা বিশ্বাস করতেন, সরকার রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে না। সেই সাথে চাকরিচ্যুত কিংবা নিঃস্ব হওয়া লোকদের ত্রাণ সরবরাহে তারা দায়বদ্ধ নন। সরাসরি নাগরিকদের সঙ্গে সমঝোতায় না গিয়ে হুভার-প্রশাসন রাষ্ট্রের বড় বড় প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দেয়, যাতে সেখান থেকে অর্থ বাঁচিয়ে তা ব্যাংকগুলোকে ঋণ হিসেবে দিতে পারে। যদিও তাদের এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। এছাড়াও তারা এই মন্দার সুযোগ কাজে লাগিয়ে মেক্সিকান শরণার্থীদের বিতাড়িত করার কার্যক্রম শুরু করেছিল।
অতঃপর নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে, ১৯৩৩ সালের মার্চের ৪ তারিখ দায়িত্ব গ্রহণ করেন ডেমোক্রেট নেতা ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মূলত রিপাবলিকানদের ব্যর্থতার দিনে ডেমোক্রেটরা পরিবর্তনের আশ্বাস দেন, যা মার্কিনিদের আকৃষ্ট করেছিলো। আর দায়িত্ব নেওয়ার ১০০ কার্যদিবসের মধ্যে রুজভেল্ট প্রশাসন শুরু করে আশার আলো দেখাতে। নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্ব দূরীকরণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুরু হয়।
রুজভেল্ট প্রথমেই চারদিনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ দেশের সমস্ত ব্যাংক বন্ধ ঘোষণা করেন। ঐ চারদিনের মধ্যে তিনি কংগ্রেসে নতুন আইন পাশ করিয়ে শিল্প, কৃষি ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে গতিশীল করার উদ্যোগ নেন। পুরোদমে শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর কার্যক্রম। রুজভেল্ট ব্যাংকের নিয়মনীতি পরিবর্তন করেন এবং শুধুমাত্র আমদানির জন্য ঋণ প্রদানের শর্ত ছুঁড়ে দেন। আর এই শর্তে স্থানীয় ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে থাকে।
রুজভেল্ট প্রশাসন বেশ কিছু বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। মূলত প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে নাগরিকদের কর্মক্ষেত্র তৈরি করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। সে প্রকল্পের মধ্যে টেনেসি ভ্যালি অঞ্চলের বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ, বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ছিল উল্লেখযোগ্য। উক্ত প্রকল্পে ১৯৩৫ সাল থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত, প্রায় ৮.৫ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক স্থায়ীভাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। শুধুমাত্র একটি প্রকল্পের মাধ্যমেই রুজভেল্ট প্রশাসন অর্ধেক নাগরিকের অবস্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম হন। এছাড়াও ডেমোক্রেটরা নেতৃত্ব কাঁধে নেওয়ার পরের ৩ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি গড়ে ৯ শতাংশ বেড়েছিল।
যখন গ্রেট ডিপ্রেশন শুরু হয়, তখনও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য কোনো সামাজিক নিরাপত্তা আইন ছিল না। ছিল না বেকার ভাতা, কিংবা বয়স্ক ভাতা। রুজভেল্ট প্রশাসন ১৯৩৫ সালে কংগ্রেসে সোশাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট পাশ করে। নতুন এই আইন পাশ করার কারণে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা বেকার ভাতা, বয়স্ক ভাতা এবং পেনশনের অন্তর্ভুক্ত হন। যদিও এই কার্যক্রমের নিয়মনীতি ছিলো খুব কঠিন। রুজভেল্ট প্রশাসনের সংস্কারপন্থী মনোভাবের কারণে ১৯৩৮ সাল থেকে আবারও অর্থনৈতিক-উন্নতির দেখা পান মার্কিনিরা। রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয়ে পার্থক্য কমতে থাকে, সেই সাথে মানুষও হয়ে ওঠেন স্বাবলম্বী। ব্যাংকগুলোও আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়ায় এবং শেয়ারবাজার আগের অবস্থানে ফিরে যায়। যদিও সেই সময় একেবারেই অর্থনৈতিক মহামন্দা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি দেশটি। কারণ পুরোপুরি ক্ষতি কাটিয়ে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজনও ছিল।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর মহামন্দার প্রভাব
১৯৩০ এর মহামন্দার প্রতিক্রিয়া ছিল তাৎক্ষণিক এবং সুদূরপ্রসারী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ধনতান্ত্রিক মুক্ত দুনিয়ার ওপর এত বড় আঘাত আর কখনও ঘটেনি। মহামন্দা ছিল যেন এক রক্তপাত হীন যুদ্ধ যার ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরাট ধস দেখা দেয়। সােভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ধনতন্ত্রী বিশ্বের অর্থনৈতিক লেনদেন ছিল না। এজন্য একমাত্র সােভিয়েত ইউনিয়নে এই মহামন্দার কবলে পড়ে নি। এর ফলে অনেক দেশে কমিউনিষ্ট রাশিয়ার পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ভিত্তিক অর্থনীতির প্রতি আগ্রহ দেখা দেয়। অনেকে বলতে থাকেন যে, ইউরােপে শিল্প বিপ্লবের ফলে যে ধনতান্ত্রিক সমাজ গঠিত হয়েছে, যার মূলমন্ত্র হল অধিক উৎপাদন ও অধিক মুনাফা, এই মহামন্দা হল তারই কুফল, এজন্য বহু লােক ধনতন্ত্রী অর্থনীতি ও উদারতন্ত্রী, বুর্জোয়া শাসনবাবস্থার প্রতি আস্থা হারায়। উদারপন্থী মূল্যবােধ, গণতান্ত্রিক আদর্শ বিপন্ন হয়।
গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে মহামন্দার সর্বনাশা প্রভাব বেশী তীব্র ছিল। এজন্য গণতান্ত্রিক ও উদারতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ওপর লােকের আস্থা নষ্ট হয়, কারণ উদারতান্ত্রিক সরকারগুলি এই মহামন্দার ধাক্কা সামলাতে পারেনি। উদারপন্থার অঙ্গ অবাধ বাণিজ্য, মুক্ত অর্থনীতি, সীমাহীন উৎপাদন দ্বারা সীমাহীন সম্পদ অর্জন, শিল্প বাণিজ্যে সরকারি হস্তক্ষেপ না করা প্রভৃতি ভাবধারা ধিকৃত হয়। উদারতন্ত্রী সরকারগুলিতে সর্বত্র ফাটল দেখা দেয়। ব্রিটিশ মুদ্রা স্টার্লিং এর অবনমন ঘটতে থাকে।
উদারপন্থা ও গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাহীনতা দেখা দিলে তার বিকল্প হিসেবে কোন কোন দেশ ফ্যাসীবাদ বা নাৎসীবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়, কোন কোন দেশ বলশেভিক সাম্যবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক সরকারের ব্যর্থতার ফলে কিছু লােক ভাবতে থাকে যে একদলীয়, একনায়কতন্ত্র শাসনের কেন্দ্রীয়তা থাকলে এরকম বিপর্যয় রােখা যেত। অনেকে অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব, মুদ্রা মূল্য হ্রাসের ফলে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশাগ্রস্থ হয়। মধ্যবিত্ত শ্রেণী যারা ছিল গণতন্ত্রের প্রধান স্তম্ভ তারাই জার্মানী প্রভৃতি দেশে আশাহত হয়। এজন্য ডিক্টেটরশিপ বা একনায়কতান্ত্রিক, একদলীয় শাসনের দিকে ঝোক বাড়ে। অপর দিকে, বহু মধ্যবিত্ত ও শ্রমিক সাম্যবাদের মধ্যে মুক্তির পথ খোঁজে। মােট কথা, কিছুদিনের জন্যে মহামন্দার ফলে রাজনৈতিক মূল্যবােধের পরিবর্তন ঘটে।
জার্মানীর ক্ষেত্রে এই মহামন্দার ফল ছিল ভয়াবহ। একেই বিশ্বযুদ্ধে অর্থনৈতিক ধ্বস ও ক্ষতিপূরণের বোঝায় জার্মানী ছিল ডুবন্ত অবস্থায। ডাওয়েজ ও ইয়ং পরিকল্পনার দ্বারা জার্মানীতে মার্কিন ঋণের প্রবাহ বইলে জার্মানী তাতে কিছুটা স্বস্তি পায়। জার্মানীর নিজস্ব অর্থনীতি ছিল ভাঙাচোরা। তার মাঝে মহামন্দার ধাক্কায় জার্মানীর নাভিশ্বাস দেখা দেয়। মার্কিন ঋণের সমর্থন না থাকায়, জার্মানীর কাগজের মুদ্রা বা মার্কের দাম ভয়ানকভাবে কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত দোকানদারেরা এই মার্ক নিতে রাজী হয়নি। তারা ব্রিটিশ পাউন্ড বা মার্কিন ডলার দাবী করে। জার্মানীর রপ্তানি বাণিজ্য ১৯২৯ খ্রীঃ ৬৩০, ০০০, ০০০ পাউন্ড থেকে পরের বছর ২৮০, ০০০, ০০০ পাউন্ডে নেমে আসে। জার্মানীর আমদানী বাণিজ্য ৬৭০, ০০০, ০০০ পাউন্ড থেকে ২৩০, ০০, ০০০ পাউন্ডে নেমে যায়। জার্মান নথীভুক্ত বেকারের সংখ্যা ১৯২৯ খ্রীঃ ২, ০০০, ০০০ থেকে ১৯৩২ খ্রীঃ ৬, ০০০, ০০০ হয়। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে, জার্মানির অর্থনৈতিক ধ্বস কত গভীর ছিল।
জার্মানীর ভাইমার প্রজাতন্ত্রের প্রতি জার্মান জনসাধারণের আস্থা বিনষ্ট হয়। জার্মানীর ১৯৩৩ খ্রীঃ সাধারণ নির্বাচনে পার্লামেন্টে নাৎসী সদস্যদের সংখ্যা ১ থেকে ১০৭-এ দাড়ায়। বলা বাহুল্য, নাৎসীরা ছিল একনায়কতন্ত্রবাদী, ভাইমার বিরােধী, ভার্সাই বিরােধী গােষ্ঠী। এই মন্দার ধাক্কা থেকে বাঁচতে জার্মানী ও অট্রিয়া উভয় দেশ শুল্ক জোট গঠন করে। কিন্তু ফ্রান্স তার নিরাপত্তার আশংকায় এই জোট গড়ার বিরােধিতা করে। ফ্রান্সের বক্তব্য ছিল যে, অর্থনৈতিক জোট শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক জোটে পরিণত হবে, যা ভার্সাই সন্ধি ও লীগের শর্ত বিরােধী। ব্রিটেন যদিও এই জোটের বিরােধী ছিল না, ফ্রান্সের চাপে ব্রিটেনকে লীগের সভায় বিষয়টিকে হেগ আদালতের কাছে বিচার্য হিসেবে পাঠান হয়। হেগ আদালত এই জোটকে অবৈধ ঘােষণা করে। ফরাসী, ব্রিটিশ, পােলিশ বিচারকরা এই রায় দিলে জার্মানী তা পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে করে। অস্ট্রো-জার্মান অর্থনৈতিক জোট ভেঙে গেলে জার্মানীর অর্থনৈতিক দুর্দশা, মুদ্রাস্ফীতি চরমে ওঠে। ভাইমার প্রজাতন্ত্রের পতনের শেষ ঘণ্টা বেজে যায়। নাৎসী নেতা হিটলার ১৯৩৩ খ্রীঃ ক্ষমতা দখল করেন।
মহামন্দা থেকে বিশ্বযুদ্ধ
বিশ্ব অর্থনৈতিক মহামন্দার ফলে ইওরােপে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ প্রবল হয়ে ওঠে। প্রতি রাষ্ট্র উচ্চ শুল্ক প্রাচীর তুলে অন্যদেশ থেকে মাল আমদানী বন্ধ করতে অর্থনৈতিক চেষ্টা করে। এজন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বড়রকমের ধাক্কা খায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও মনরাে নীতির দোহাই দিয়ে ইওরােপের অনৈতিক জটিলতা ও ইওরােপীয় মাল আমদানী থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে চেষ্টা করে। ব্রিটেন স্বর্ণমান ত্যাগ করে রৌপ্যমান গ্রহণ করে। অটোয়া (Ottowa) চুক্তির দ্বারা কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলিকে নিয়ে আলাদা নির্দিষ্ট পারস্পরিক শুল্ক হার স্থির করে। এইভাবে বিভিন্ন দেশ আঞ্চলিক অথনৈতিক শুল্ক গঠনের চেষ্টা করে। এই অর্থনৈতিক স্বতন্ত্র স্থাপনের চেষ্টা, ঐতিহাসিক ল্যাসােমের মতে, ইওরােপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিমণ্ডল রচনা করে। কোন কোন দেশ ভাবতে থাকে যে, এই আন্তর্জাতিক মহামন্দাকে কাটাতে হলে যুদ্ধই হল একমাত্র পথ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন নীরবে এগিয়ে চলছিল, ঠিক তখন ইউরোপে শুরু হয় রাজনৈতিক আন্দোলন, যা পরবর্তীকালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয়। জার্মান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সকে সমর্থন করায় জার্মানদের চক্ষুশূলে পরিণত হন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট। আর এতে করে নানারকম হুমকির সম্মুখীন হন তিনি। যুদ্ধের অশনি সংকেত টের পেয়ে, সামরিক শক্তির উন্নয়ন ঘটান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট। এতে করে লক্ষ লক্ষ লোকের নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। সেই সাথে গ্রেট ডিপ্রেশন বা অর্থনৈতিক মহামন্দা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মহামন্দার দুটি ধ্রুপদী তত্ত্ব হল কেইনেসীয় (চাহিদা চালিত) এবং অর্থ-কেন্দ্রিক ব্যাখ্যা। চাহিদা চালিত তত্ত্বে বলা হয় বাজারের উপর আস্থা হারানোর ফলে ভোগের পরিমাণ ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত ব্যয় কমে যায়। একবার মূল্যহ্রাস পাওয়ার ফলে অনেক মানুষ ধারণা করে নতুন করে বাজারে বিনিয়োগ না করে তারা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। টাকা বিনিয়োগ না করায় মূল্যহ্রাস পেলে তারা লাভবান হয় এবং চাহিদা কমায় স্বল্পমূল্যে অধিক পণ্য ক্রয় করতে পারে। অর্থ-কেন্দ্রিক ব্যাখ্যাকারীরা মনে করেন মহামন্দা সাধারন দরপতন হিসেবে শুরু হয় কিন্তু অর্থ সরবরাহ সঙ্কুচিত হতে থাকলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে থাকে এবং এই সাধারন দরপতন মহামন্দার রূপ ধারণ করে।
অর্থনীতিবিদ ও অর্থনৈতিক ইতিহাসবেত্তাগণ সমানভাবে বিভক্ত এবং তারা মনে করেন প্রথাগত আর্থিক ব্যাখ্যা অনুসারে মহামন্দার প্রাথমিক কারণ আর্থিক খাতের সাথে সম্পর্কিত, বা প্রথাগত কেইনেসীয় ব্যাখ্যা অনুসারে মহামন্দার প্রাথমিক কারণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যয়, বিশেষ করে বিনিয়োগ সংক্রান্ত ব্যয়ের পতন। বর্তমানে এই বিতর্ক তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় কারণ ঋণ সংকোচন তত্ত্বের কিছু মূলধারার সমর্থন পাওয়া যায় এবং মিল্টন ফ্রিড্ম্যান ও আনা শোয়ার্ট্জ এর আর্থিক ব্যাখ্যার ভিত্তিতে তৈরি হাইপোথিসিসে অ-আর্থিক ব্যাখ্যাও যোগ করা হয়েছে।
এই ব্যাপারে মতৈক্য রয়েছে যে ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম এর আর্থিক সংকোচন এবং ব্যাংকিং পতন রোধ করা উচিত ছিল। যদি ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম তা করতে পারত তাহলে মন্দার প্রভাব আরো কম তীব্র এবং স্বল্পস্থায়ী হত।
গ্রেট ডিপ্রেশনের প্রভাব
১৯২৯ সালের অক্টোবরের ঐ দুই দিনে প্রায় ধ্বংস হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার। নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়েন নতুন বিনিয়োগকারীরা। আর এর প্রভাব পড়তে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট-বড় সকল ক্ষেত্রে। কয়েকদিনের মধ্যে শিল্পকারখানার উৎপাদন অর্ধেক হ্রাস পায়। ব্যবসায়ে নিশ্চিত ক্ষতি বুঝতে পেরে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী ছাঁটাই শুরু করে। কোথাও কোথাও গুলিবর্ষণ করে কর্মীদের মেরে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটে। দোকানগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও, ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছিলেন না বিক্রেতারা। মাত্র ১ বছরের মাথায় প্রায় ১ কোটি মার্কিন নাগরিক বেকার হয়ে পড়েন, যা ১৯৩১ সালে গিয়ে দেড় কোটিতে ঠেকে। রাষ্ট্রপতি হার্বার্ট হুভারের প্রশাসনও এই অবস্থায় দিশেহারা হয়ে যায়। তারা তাদের বেশকিছু বড় প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানেও লক্ষ লক্ষ লোক বেকার হয়ে পড়েন।
সংগ্রহ : মেহেদী হাসান, তথ্যসুত্র : কমলেন্দু সুত্রধর, ইতিহাসে পাতিহাঁস, উইকিপিডিয়া, শাহদত হোসেন এর সামহোয়্যার ইন বাংলা ব্লগ কলাম, The Great Depression History By Wikipedia, বই একুশ শতকের মহামন্দা।