• ২০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৪শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

হাকালুকি হাওরে নৌকা বিলাস : মো. জাহাঙ্গীর আলম

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত অক্টোবর ১৩, ২০২০
হাকালুকি হাওরে নৌকা বিলাস : মো. জাহাঙ্গীর আলম

১২ অক্টোবর দুপুরে আমরা যথারীতি জুড়ী কন্টিনালা ব্রীজের পাশের নৌকা ঘাট থেকে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি ও সহকারী শিক্ষক সমিতির যৌথ উদ্যোগে ২০১৮ ও ২০২০ ব্যাচের নিয়োগপ্রাপ্ত নবীন শিক্ষকদের বরণ ও আনন্দঘন কিছু মুহূর্ত উপভোগ করার জন্য শতাধিক শিক্ষকের দল নিয়ে ছুটলাম; লক্ষ্য হাকালুকি হাওরের অন্য প্রান্তে ফেঞ্চুগঞ্জের ঘিলাছড়া বাজার জিরো পয়েন্ট।আমাদের যাত্রা শুভ কামনা করে শুভ উদ্ভোদন করেন জুড়ী উপজেলা পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মোঈদ ফারুক সাহেব । সাথে আমরা অতিথি হিসেবে পাই জুড়ী উপজেলা পরিষদের সম্মানিত ভাইস চেয়ারম্যান বাবু রিংকু রঞ্জন দাস, জুড়ী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মামুনুর রশীদ সাজু ভাই, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইছহাক স্যার, দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম ভাই কে।

পাখি দর্শন টাওয়ার ঘেষে যখন হাওরের মাঝখানে চারিদিকে শুধু অথৈ জলরাশি এ যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি কানে যেন মুক্ত হাওরের সুশীতল বাতাস ঢুকছে। চারদিকে অথৈ পানি স্পষ্ট বাড়িঘর দেখা যাচ্ছেনা। একটু অসতর্কতায় ডুবে যেতে পারে নৌকা, এখানে নৌকা ডুবলে সাঁতার কেটে কিনারায় ওঠার মত শক্তি কারোরই নেই। তাই খুব সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য মাঝি বারবার ওয়ার্নিং করে দিচ্ছেন। পুরো হাওরের সবগুলো বিল একত্র হয়ে আছে, আলাদা করার সুযোগ নেই! প্রনয় স্যার, মঞ্জু ম্যাডাম, শিবানী ম্যাডাম সহ অনেকের গানে ঝিমানো ভাবটা দূর হলো।

হাওর থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ ঘিলাছড়া বাজারের জিরো পয়েন্টের ঘাটে নৌকা ভিড়ালেন মাঝি ভাই। আমরা সতর্কতার সাথে পারে উঠলাম।

চরম আনন্দ-উদ্দীপনায় হাঁটাহাঁটি এবং ফটোসেশন করলাম কিছুক্ষণ। এরপর শুরু হলো আমাদের মূল অনুষ্ঠান নবীনদের বরণ। অনুষ্ঠান যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন আমাদের সবার প্রিয় আজিজ ভাই অমরজিত স্যার। এতে অতিথিবৃন্দ বক্তব্য রাখেন এবং নবীন শিক্ষকদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। আমাদের এই অনুষ্ঠানটি ছিল নবাগতদের সাথে সেতুবন্ধন। সেখানেই আমরা নৌকা থেকে খাবারের প্যাকেটগুলো নামিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে দুপুরের লাঞ্চ সম্পন্ন করে নিলাম। খাবার শেষে আবার নৌকায়।

অবিরামভাবে নৌকা সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। আমরা আমাদের মত করে ইচ্ছেমত আড্ডা মাস্তি চালিয়ে যাচ্ছি।কিছু জায়গায় পানির মধ্যেই বেশ হিজল, তমাল গাছগাছালি রয়েছে। হাওরের মাছের আশ্রয়স্থল প্রাকৃতিক জলাবন টাওয়ার থেকে দেখা বেশ মনোমুগ্ধকর। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কচুরিপানার দল। সময় স্বল্পতার কারণে সেখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। নিজ গন্তব্যের দিকে অবিরাম চলছে নৌকা। বিশাল হাওরের বুকে দুহাত মেলে গায়ে বাতাস মাখছি। শেষ বিকেলের নির্মল বাতাস মন মুগ্ধকর পরিবেশ সত্যিই অসাধারণ। কিছুক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো আস্তে আস্তে করে অন্ধকারে ঢেকে যেতে লাগলো আমাদের চারপাশ।

আসার পথে মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে কি যে অপূর্ব লাগে প্রকাশ করার মত না। উপরে বিশাল আকাশ নিচে বিশাল হাওর মাঝখানে ক্ষুদ্র আমি। আগ্রহ জাগে পুরোপুরি অন্ধকারে হাওর কেমন হয় জানতে। গল্প জুড়লাম পাশে থাকা জালাল ভাই, শফিক ভাইও কাইয়ুম ভাইর সাথে। জানতে পারলাম শীত বর্ষায় জেলেরা হাওরে মাছ ধরেন। হাওরপারের প্রায় প্রতিটি পরিবার মাছ ধরার জন্য পারদর্শী এবং অধিকাংশ লোক প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত। বর্ষার রাতে অন্ধকারের মধ্যে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যান। হাওরের মাঝে অন্ধকারে ছোট ছোট আলো দেখা যায়।

সতর্কতাঃ পরিবেশ সচেতন পর্যটক হিসেবে প্লাস্টিক, পলিথিন সহ সব রকমের আবর্জনা হাওরে যত্রতত্র না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা। এ ধরনের কাজ থেকে নিজে বিরত থাকুন এবং অপরকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। হাওরে বিদেশী ও দেশীয় পাখীর বিচরণক্ষেত্র হতে নিদিষ্ট দূরত্বে থেকে পাখি পর্যবেক্ষণ ও চলাফেরা করুন। হাওরে ভ্রমণকালে হৈ চৈ, কোলাহল বা উচ্চস্বরে গান-বাজনা পরিহার করা।
পরিশেষে একটি কথাই বলবো আজকের এইদিনটি স্মৃতির মানষপটে আজীবন লালিত থাকবে। এরকম একটি আনন্দঘন মুহূর্তের আয়োজন করতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন যাদের দু,একজনের নাম বলতেই হয় প্রিয় অশোক স্যার, আজিজ ভাই, মাসুক ভাই,সালেহ ভাই, অমরজিত দা।স্বার্থক হয়েছে আপনাদের এ ভিন্নতা। আজকের এই স্মৃতিচারণ নিয়ে আমাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করেছেন আমার প্রিয় ফরমান স্যার। এগিয়ে চলুক আমাদের এ বন্ধন।

লেখক : মো. জাহাঙ্গীর আলম, প্রধান শিক্ষক, নিশ্চিন্ত পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

June 2025
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930