খালেদ মাসুদ , জুড়ী :: চারিদিকে পানি আর পানি। বুক চিরে চলছে নৌকা। কেউ মাছ ধরতে, কেউ বা নৌকা ভ্রমনে এসেছে। পর্যটনপ্রেমিদের মনে খোরাক জোগায় এইসব ভ্রমন।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ হাওর হাকালুকি। সিলেটের বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া উপজেলায় যার অবস্থান। উল্লেখ্য, হাকালুকি হাওর এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির জলাশয়। যার আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর। তন্মধ্যে শুধুমাত্র বিলের আয়তন ৪,৪০০ হেক্টর। এটি মৌলভীবাজার জেলার় বড়লেখা (২০%), জুড়ী (২০%), কুলাউড়া (৩০%), এবং সিলেট জেলার় ফেঞ্চুগঞ্জ (১৫%), গোলাপগঞ্জ (১০%) এবং বিয়ানীবাজার (৫%) জুড়ে বিস্তৃত। ভূতাত্ত্বিকভাবে এর অবস্থান, উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় এবং পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের পাদদেশে। এর অবস্থানের জন্য অবশ্য এই সকল উপজেলার বাসিন্দারা গর্ব করতে পারেন। বিশাল হাওরের উপর নির্ভর করে বেচে আছেন এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। শুধু মানুষ নয় বেচে থাকে অসংখ্য পশুপাখি। জীববিজ্ঞানীদের মতে, হাকালুকি হাওরে ১৫০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ, ১২০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ বিলুপ্ত প্রায়। এখানে প্রতি বছর শীতকালে প্রায় ২০০ বিরল প্রজাতির অতিথি পাখির সমাগম ঘটে। হাকালুকি হাওরে প্রায় ২৩৮টি বিল আছে। হাকালুকি হাওরের বিলগুলিতে বিভিন্ন জাতের বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। তবে এক সময়ের অন্যতম আকর্ষণীয় Swamp Forest অর্থাৎ জলময় নিম্নভূমির বনাঞ্চল এখন আর তেমন নেই। সারা বছর কোনো না উপায়ে মানুষ এর উপর নির্ভর করে। বিশেষ করে পর্যটকরা এখানে আসেন। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবে তারা সন্তুষ্ট হন না।
কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওর বর্তমানে ভ্রমন প্রেমিদের জন্য পছন্দের স্থানে পরিনত হয়েছে।। কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা উপজেলার প্রায় সবটুকু এলাকাজুড়ে বিস্তৃত নিকলী হাওর। গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মহামান্য এডভোকেট আব্দুল হামিদের কল্যাণে যা আজ সারাদেশে পরিচয়। হাওরের মধ্যে দিয়ে চলেগেছে রাস্তা। যা থেকে হাওরের অপরুপ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। যার ফলে হাওরের সৌন্দর্য দেখা গেলে এবং বেরিবাধের কাজও হয়ে গেলো। এতে করে ঐ তিনটি উপজেলার বাসিন্দাদের আর্থিক উন্নয়ন হবে। সারা বছর অসংখ্য ভ্রমনকারীদের আনাগোনা দেখা যায়।
চাইলে হাকালুকি হাওরকেও সৌন্দর্য মণ্ডিত করা যায়। হাওরে বুকচিরে যদি রাস্তা করা হয়, অথবা অন্য কোন পরিকল্পনা করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়, তাহলে এইসকল এলাকায় পর্যটন খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। হাওর কেন্দ্রীক গড়ে উটতে পারে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। আশা করা যায় আমরা নিকলী হাওর থেকে শিক্ষা নিয়ে হাকালুকি হাওরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হবে।