করোনাকালীন এ সময়ে রোগ প্রতিরোধের জন্য ভিটামিন -সি, জিংক ও ভিটামিন- ডি এর প্রয়োজনীয়তার কিছু কারণ এবং তার উৎসের কিছু কথা।
বিশেষ করে আমাদের হাড় বা অস্থির গঠন যথাযথভাবে শক্ত ও মজবুত এবং অক্ষত রাখতে ক্যালসিয়াম আবশ্যক। তাছাড়া আমাদের দাঁত, নোখ, চুল প্রভৃতি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুন্দর ও মজবুত রাখার জন্যও ক্যালসিয়াম একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। এই ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরে সঠিক মাত্রায় শোষিত না হলে প্রধানত আমাদের হাড় ক্ষয় শুরু হয় এবং এক সময় ভঙ্গুর আবস্হায় পর্যবসিত হয়। আর এ ভঙ্গুরতা ও ক্ষয়কে আর্থাইটিস ও অষ্টিয়পরোসিস বলা হয়। এ ছাড়াও এই ক্যালসিয়ামের অভাবে মাসলের শিথিলতা বা ইলাস্টিসিটি কমে যায় এবং মাঝে মধ্যে তাতে খিচুনি বা টান পড়ে। এই ক্যালসিয়াম শোষণের জন্যই ভিটামিন -ডি আবশ্যক। ভিটামিন -ডি আমাদের এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরীর জন্যও প্রয়োজন। এছাড়া জিংকও রক্তের শ্বেত কণিকাকে পুষ্ঠি যুগিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করে । ভিটামিন- সি আয়রন শোষণে ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কাজেই এই করোনাকালীন সময়ে ভিটামিন -ডি, সি ও জিংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলো গ্রহণ করতে পারলে যথেষ্ট উপকার হবে । ডিমে -ডি ও জিংক এবং বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও মাংসে জিংক পর্যাপ্ত পাওয়া যায় । সারা বিশ্বব্যাপি ভিটামিন- ‘ডি’ এর ঘাটতি একটি বড় সমস্যা। অথচ এই ‘ডি’ র ঘাটতি সূর্যের আলো থেকে আমরা ৮০থেকে ৮৫% পুরণ করতে পারি। ডিম দুধসহ প্রাণীজ আমিষ থেকে ভিটামিন ডি-২, ভি-৩ কিছুটা গ্রহণ করতে পারলেও, অ্যাসেনসিয়াল ডি সূর্যের আলো থেকেই গ্রহণ করতে হয়। অ্যাসেনসিয়াল বলতে বুঝায় যা আমাদের শরীর নিজ থেকে উৎপাদন করতে পারে না। তাহলে এই ভিটামিন ডি কখন, কিভাবে, কতটুকু সময়ে গ্রহণ করা যায়, সে বিষয়ে আলোকপাত করা যাক। সাধারণত সকাল দশটা থেকে তিনটা পর্যন্ত এর গ্রহণের সঠিক সময় । তবে মধ্যাহ্নের সূর্য যখন মাথার উপরে থাকে ঠিক ঐ সময়ের আলো থেকে ভিটামিন ডি কম সময়ে বেশি পরিমান গ্রহণ করা যায় । তবে শরীরের যত বেশী অংশ খোলা রাখা যায় ততোই বেশি শোষিত হয় । ২৫ থেকে ৩০ মিনিট হলেই চলে । তবে এই শোষণ প্রক্রিয়ায় আমাদের ত্বকের মেলানিন কিছুটা বাঁধা প্রদান করে । এ জন্য ব্যক্তিভেদে শোষণের ক্ষেত্রে তারতম্য ঘটে । অর্থাৎ মেলানিনের মাত্রা বেশি থাকলে আমাদের চেহারা সে অনুপাতে বেশি অনুজ্জ্বল থাকে। আর অনুজ্জ্বল চেহারায় রোদ থেকে ভিটামিন- ডি শোষণ করতে সময় একটু বেশি নেয় । কাজেই উজ্জ্বল বা তুলনামূলক সাদা চেহারায় তাড়াতাড়ি গ্রহণ করতে পারে। কাজেই চেহারা কম উজ্জ্বল হলে একটু বেশি সময় রোদ পোহালে ভালো হয়। আর ভিটামিন এই ডি রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলেই শ্রমজীবীরা যারা রোদ বৃষ্টিতে কাজ করেন তাদের শক্তিশালী অ্যান্টিবডির কারণে তারা করোনাসহ বহু রকমের রোগের ভাইরাস ও জীবাণু প্রতিরোধ করতে সক্ষম হন । কাজেই আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, বিশেষ করে করোনাকালীন এ সময়ে ভিটামিন -ডি, সি ও জিংক গ্রহণ করা খুবই জরুরী । লেবুতে ভিটামিন সি বা সাইট্রাস নামক যে উপাদান আছে তা রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী। তবে এ সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রতিদিন একটি করে ভিটামিন -ডি ও ২০ গ্রামের একটি জিংক টেবলেট কিছুদিন গ্রহণ করা যেতে পারে। শেষ কথা হচ্ছে সবকিছুকে কার্যকরী করতে পানি আবশ্যক । কাজেই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা আবশ্যক ।
কথায় আছে, স্বাস্হ্যই সকল সুখের মূল । আর সুখের মাঝেই আনন্দের বসবাস । কাজেই সুস্থ্য থেকে বাঁচাটাই জীবনের সবচেয়ে বড় মুনাফা ।
লেখকঃ জহির উদ্দিন, অধ্যক্ষ, শাহনিমাত্রা এস এফ ডিগ্রি কলেজ, জুড়ী, মৌলভীবাজার।