• ২৪শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৪শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামের সামাজিক সৌন্দর্য

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত অক্টোবর ২৫, ২০২০
ইসলামের সামাজিক সৌন্দর্য

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। এ হিসেবে সামাজিক খুঁটিনাটি বিষয়াদিও ইসলামে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সামাজিক যত সৌন্দর্য আছে সবই ইসলামে নিহিত। যুগে যুগে প্রেরিত নবী-রাসুলেরা মানুষকে আল্লাহমুখী হওয়ার শিক্ষা যেমন দিয়েছেন তেমনি শিখিয়েছেন সামাজিকতা। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) একজন মুসলমানের নিছক পরকালীন পথপ্রদর্শকই ছিলেন না, জীবনাচার ও সামাজিকতার শিক্ষকও ছিলেন। পৃথিবীর কোনো মানুষই এমন নয় যার জন্য কারও সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে না। সমাজে টিকে থাকতে হলে প্রত্যেককে অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতে হয়। জীবনের নির্বিঘ্নতার জন্য এটি প্রয়োজন। ইসলাম এ জন্য মানুষকে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়।

মহানবী (সা.) বলেছেন, এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য একটি দেয়ালের ইটগুলোর মতো সম্পূরক স্বরূপ- তারা একে অপরের দ্বারা স্থিতি অর্জন করে। এই বলে তিনি নিজের দুই হাতের আঙুলগুলো পরস্পরের মধ্যে ঢোকালেন। এ হাদিসে রাসুল (সা.) মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। অন্য হাদিসে আছে, মুসলমান জাতি একটি দেহের মতো। চোখ অসুস্থ হলে গোটা দেহ অসুস্থ হয়। আবার মাথা অসুস্থ হলেও গোটা দেহে এর প্রতিক্রিয়া হয়। মুমিনরা যদি প্রকৃতই পরস্পরের সহমর্মী হয়, তাহলে তাদের একের ব্যথায় অন্যরা ব্যথিত হবে, একের সুখে অন্যরা আনন্দিত হবে। ইসলাম যেহেতু গোটা মানবতাকে একই পরিবারের সদস্য বলে বিবেচনা করে, সুতরাং তাদের মধ্যকার সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য নানাভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইসলামে বিভিন্ন ইবাদত, বন্দেগির নিয়মপদ্ধতি এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে যে, তার মাধ্যমে যেন মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের সঙ্গে সঙ্গে মানবসমাজে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি ও উন্নয়ন সম্ভব হয়।

আল্লাহ তায়ালা কিছু বিশেষ নিয়মসংবলিত ইবাদতের বিধান দিয়েছেন। আবার একাকী নয়, সম্মিলিতভাবে তা পালনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি দিকই অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। সম্প্রীতি ও ঐক্যের যে মহড়া চলে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের সময়, তা মুমিনদের আন্তরিক যোগসূত্রকে আরও মজবুত করে। আর এর ফলে মুসলমানদের সমাজে বিরাজ করতে থাকে অনাবিল পরিবেশ। বিশেষ করে জুমার নামাজ এমন এক ইবাদত যা মুমিনদের পরম করুণাময়ের আহ্বানে হাজির করে, একইসঙ্গে তাদের সমাজ বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। এভাবে ইসলামের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে সামাজিক সৌন্দর্য। ইসলামি জীবনব্যবস্থাই হলো সামাজিক সব সমস্যার উৎকৃষ্ট সমাধান। মানবজীবনে সম্ভাব্য যত সমস্যা হতে পারে এর সব সমাধানই ইসলাম দিয়েছে। যেমন দারিদ্র্য প্রত্যেক সমাজের একটি মারাত্মক সমস্যা। দারিদ্র্য নিরসনের কার্যকরী নির্দেশনা ইসলাম দিয়েছে। কোরআন-হাদিসে দারিদ্র্যের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে ধনীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক সুষম বণ্টন এবং জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু করলে দারিদ্র্য দূর হতে পারে।

বেকারত্ব সমাজের একটি বড় সমস্যা। রাসুল (সা.) সব মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে মডেল হিসেবে রেখে গেছেন মদিনা রাষ্ট্রকে। তিনি নিজে সবধরনের কাজ করেছেন। হালালভাবে জীবিকা উপার্জনে যেকোনো কাজে কোনো দ্বিধা করেননি। নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতা দূর করতেও ইসলামে রয়েছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘পড়ুন, আপনার প্রতিপালক মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না।’

সামাজিক অনাচার ও সমস্যার সমাধানে ইসলাম সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। সামাজিক অনাচারের অন্যতম জুয়াকে ইসলামে ঘৃণ্য কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মিথ্যাচারকে মুনাফিকের লক্ষণ বলা হয়েছে। ধূমপানকে ইসলাম হারাম করেছে। মাদকাসক্তিকে ইসলামে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলাম অন্যায় ও অনাচারমূলক কাজ থেকে শুধু নিষিদ্ধই করেনি, কীভাবে পাপমুক্ত জীবন গড়তে হবে এর সুস্পষ্ট নীতিমালাও বর্ণনা করেছে। সামাজিক অন্যায় ও অসততার বীজগুলো যেন অঙ্গুরেই বিনাশ হয়ে যায় সে ব্যবস্থাপত্র ইসলাম দিয়েছে। সূত্র: ঢাকাটাইমস।

এ আর / হাকালুকি

March 2025
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031