একজন মুসলিমের জন্যে একমাত্র মনোনীত দীন কিংবা জীবন ব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম ধর্ম, আল্লাহ বলেন— নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত দীন হচ্ছে ইসলাম। [সূরা আল ইমরান, আয়াত ১৯]
ইসলামের আগমন হয়েছে হজরত মুহাম্মাদের (সা.) মাধ্যম হয়ে। সুতরাং তিনি ইসলামের নবী। সত্য পথ প্রদর্শক। তিনি সমস্ত মানব জাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত নবী ও রাসূল। সর্বশেষ পয়গাম্বর। পবিত্র কোরআন তার ওপর নাজিল হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যের কোনো পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সমস্ত নবীদের শেষ নবী। [সূরা আহযাব ৪০]
ইসলাম শব্দের অর্থ : ইসলাম একটি আরবি শব্দ। শাব্দিকভাবে ইসলাম অর্থ হলো নিজেকে সমর্পণ করা। আত্মসমর্পণ করা। যেমন, পবিত্র কোরআনে এসেছে— আরবের বেদুঈনরা বলে, আমরা ঈমান এনেছি। হে নবী (তাদের) বলুন, তোমরা এখন পর্যন্ত ঈমান আনোনি, বরং বলো আমরা নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে আল্লাহর ওপর সর্মপণ করেছি। কারণ ঈমান এখন পর্যন্ত তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। [সূরা হুজুরাত, আয়াত ১৪]
আবার কেউ কেউ বলেছেন, ইসলাম শব্দটির শাব্দিক অর্থ শান্তি। আরবি ভাষায় ‘ইসলাম’ বলতে বুঝায় আনুগত্য ও অনুসরণ। আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও তার বাধ্যতা স্বীকার করে নেয়াই এ ধর্মের মূল লক্ষ্য বলেই এর নাম হয়েছে ‘ইসলাম’। [ইসলাম পরচিতি, সৈয়দ আব্দুল মান্নান, ইসলামি ফাউণ্ডেশন]
রাসূল (সা.) কর্তৃক প্রদত্ত ইসলামের সংজ্ঞা : হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলের (সা.) কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হলেন। তার পোশাক ছিলো ধবধবে সাদা, আর চুল কুচকুচে কালো। দূর থেকে ভ্রমণ করে আসার কোনো লক্ষণ তার মধ্যে দেখা যাচ্ছিলো না; অথচ তিনি আমাদের পরিচিতও নন। তিনি রাসূলের (সা.) কাছাকাছি এলেন, তার হাঁটুতে হাঁটু লাগিয়ে বসলেন এবং তার দুহাতের তালু নিজের উরুতে রেখে বসলেন। তারপর বললেন, হে মুহাম্মদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন। রাসূল (সা.) বললেন, ইসলাম হচ্ছে এই কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) তার রাসূল, সালাত কায়েম করা, জাকাত আদায় করা, রমজানে সিয়াম পালন করা এবং সামর্থ থাকলে আল্লাহর ঘরে গিয়ে হজ করা। একথা শুনে তিনি বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। আমরা অবাক হয়ে গেলাম— প্রশ্নও তিনি করছেন, আবার তিনিই উত্তরকে সত্য বলে সত্যায়ন করছেন। [বুখারি, মুসলিম]
ইসলাম নামকরণ কেন? দুনিয়ায় যত রকম ধর্ম রয়েছে তার প্রত্যেকটির নামকরণ হয়েছে কোনো না কোনো বিশেষ ব্যক্তির নামে। অথবা যে জাতির মধ্যে তার জন্ম হয়েছে তার নামে। যেমন, ঈসায়ী ধর্মের নাম রাখা হয়েছে তার প্রচারক হজরত ঈসা (আ.)- এর নামে। দুনিয়ায় আরো যেসব ধর্ম রয়েছে, তাদের নামকরণ হয়েছে এমনিভাবেই। নামের দিক দিয়ে ইসলামের রয়েছে একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। কোনো বিশেষ ব্যক্তি অথবা জাতির সাথে তার নামের কোনো সংযোগ নেই। বরং ‘ইসলাম’ শব্দটির অর্থের মধ্যের আমরা একটি বিশেষ গুণের পরিচয় পাওয়া যায় এবং সেই গুণই প্রকাশ পাচ্ছে এ নামে। নাম থেকেই বুঝা যায় যে, ইসলাম কোনো এক ব্যক্তির আবিষ্কার নয়, কোনো একটি জাতির মধ্যে এ ধর্ম সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম কোনো বিশেষ ব্যক্তি, দেশ অথবা জাতির সম্পত্তি নয়। তার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে ইসলামের গুণরাজির বিস্তার ঘটানো। প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক কওমের যেসব খাঁটি ও সৎলোকের মধ্যে এসব গুণ পাওয়া গেছে, তারা ছিলেন ‘মুসলিম’। এ ধরনের লোক অতীতে ছিলো, আজও রয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন। [নিউ মুসলিম গাইড বাই নিউ মুসলিম ডট ইনফো ]
ইসলামের মূল ভিত্তি : ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি— এক. কালেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’-এর সাক্ষ্য দেয়া। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের অর্থে কোনো উপাস্য নেই। আর মুহাম্মদের (সা.) সমস্ত কথা ও কাজের ওপর আমল করা ওয়াজিব, যা তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে পৌঁছিয়েছেন।
দুই. সালাত কায়েম করা। অর্থাৎ সালাতের রোকন ও ওয়াজিবসমূহ পুরোপুরিভাবে আদায় করা এবং সালাতের মধ্যে খুশু-খুজু (আল্লাহর ভয়) বজায় রাখা।
তিন. জাকাত প্রদান করা। যখন কোনো মুসলিম সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সেই পরিমাণ অর্থের মালিক হয়, তখন তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হয়। প্রত্যেক বছরের শেষে জাকাত হিসাবে শতকরা ২.৫০% (চল্লিশ ভাগের এক ভাগ) হারে আদায় করতে হবে। নগদ টাকা ব্যতিত অন্যান্য জিনিসের জাকাত আদায়েরও নির্দিষ্ট হিসাব রয়েছে।
চার. বাইতুল্লাহতে গিয়ে হজ আদায় করা । যার সামর্থ আছে হজ কেবল তার ওপর ফরজ।
পাঁচ. রমজানে সিয়াম পালন করা। সিয়াম হলো— খাদ্য, পানীয় এবং অন্যান্য যেসব কারণে সিয়াম [রোজা] ভঙ্গ হয় তা থেকে রোজার উদ্দেশ্যে সূর্য দয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিরত থাকা। [সহিহ বুখারি ও মুসলিম]
কালেমার বা বিশ্বাসের অর্থ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থ আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই। এই কালেমার মাধ্যমে আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকলের উপাসনা, আরাধনাকে অস্বীকার করা হয় এবং আল্লাহই যে সত্যিকারের মাবুদ তা স্বীকার করা হয়।
আল্লাহ পাক বলেন— জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো মাবুদ নেই। [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ১৯]
রাসূল (সা.) বলেন— যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়বে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে [বুখারি]
আর ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ বাক্যের অর্থ হলো মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল । অর্থাৎ এই ঈমান পোষণ করা যে, তিনি অবশ্যই আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত রাসূল। অতএব তার সমস্ত কথাকে সত্য বলে স্বীকার করা আর তিনি যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন করা। যে কথা বা কাজ করতে নিষেধ করেছেন বা ধমকি দিয়েছেন তা থেকে বিরত থাকা। আর আমরা আল্লাহ তাআলার ইবাদত সেভাবেই করব যেভাবে তিনি করতে বলেছেন। রাসূলকে (সা.) ভালোবাসাও এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত । [গবেষণাপত্র- কালেমার মর্মকথা, লেখক- ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক, প্রকাশনা- ইসলাম হাউজ ডট কম]
ইসলাম ও ইমান : ইসলাম ঈমানের মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ কোরআনে ইরশাদ করেন- তোমরা বলো, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি নাজিল হয়েছে এবং যা ইব্রাহীম, ইস্মাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তার বংশধরদের প্রতি নাজিল হয়েছে এবং যা মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের রবের কাছ থেকে দেয়া হয়েছে। আমরা তাদের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না । আর আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণকারী। [সূরা বাকারা, আয়াত ১৩৬]
আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক তার বান্দাদেরকে আদিষ্ট এই মহান নীতিমালা এমন, যার ওপর সকল নবী ও রাসূল ঐকমত্য পোষণ করেছেন। আর তা সর্বোত্তম সৎকর্ম ও বিশ্বাসসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে। দ্বিতীয়ত: এটি এমন এক দীন, যার মূল বিষয় হলো আল্লাহর প্রতি ঈমান; আর যার ফলাফল হলো এমন প্রত্যেক কাজে-কর্মে ধাবিত হওয়া, যা তিনি (আল্লাহ) ভালবাসেন এবং পছন্দ করেন; আর তা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য সম্পাদন করা— এর চেয়ে সুন্দর, মহান ও উত্তম কোন জীবনব্যবস্থার কল্পনা করা যায় না। এই দীনের নির্দেশ হচ্ছে নবীগণকে প্রদত্ত সকল কিছুর প্রতি ঈমান আনা; তাঁদের রিসালাতকে বিশ্বাস করা; তারা তাদের রব ও প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যে সত্য নিয়ে এসেছেন তার স্বীকৃতি প্রদান করা এবং তাঁদের মধ্যে কোনো প্রকার পার্থক্য সৃষ্টি না করা; আর এ স্বীকৃতি দেওয়া যে, তাঁরা সকলেই আল্লাহর সত্যবাদী রাসূল ও তাঁর একনিষ্ঠ বিশ্বস্ত বান্দা— সেই দীনের প্রতি কোনো প্রকার আপত্তি ও দুর্নাম রটনা করা অসম্ভব। [ইসলাম পরচিতি, সৈয়দ আব্দুল মান্নান, ইসলামি ফাউণ্ডেশন]
ইমানের মূল ভিত্তিসমূহ : সন্দেহ নেই, কালেমার এই বাক্যে ঈমানের মৌলিক কথা চলে এসেছে । তবে কালেমা পাঠের সাথে ঈমানের আরও সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিষয় জড়িত রয়েছে । সুতরাং ঈমান আনা মানে হলো—
১. আল্লাহ পাকের ওপর ঈমান আনা। এতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, তার অস্তিত্বে ও একত্ববাদে বিশ্বাস করা। তার গুণাবলিতে বিশ্বাস করা এবং বিশ্বাস করা সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র তারই প্রাপ্য।
২. তার ফেরেশতাদের ওপর ঈমান আনা । তারা নূরের তৈরি। তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহ পাকের হুকুমসমূহকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য।
৩. তার কিতাবসমূহের ওপর ঈমান আনা। এর মধ্যে আছে তাওরাত, ইনজিল, যাবুর, কোরআন। কোরআন সর্বোত্তম ও সর্বশেষ কিতাব।
৪. তার রাসূলদের ওপর ঈমান আনা। তাদের মধ্যে প্রথম হলেন আদম (আ.) এবং সর্বশেষ হলেন মুহাম্মদ (সা.)।
৫. আখিরাতের ওপর ঈমান আনা । যেদিন মানুষের আমলসমূহের বিচার হবে।
৬. তাকদির বা ভগ্যের ভালো-মন্দের ওপর ঈমান আনা । আসবাব বা উপকরণ ব্যবহার করার কারণে বা ভাগ্যের ভালো-মন্দ যাই ঘটুক না কেনো তাতে সন্তুষ্ট থাকা, কারণ তা আল্লাহ থেকে প্রদত্ত।
৭. মৃত্যুর পরে পুনরুত্থানে বিশ্বাস করা । [সহিহ মুসলিম]
ইসলাম ও ইমান : প্রায় দেড় হাজার বছর আগের কথা। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবীদের নিয়ে বসে আছেন। এমন সময়ে এক আজব ঘটনা ঘটল। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমার (রা.) মুখ থেকেই ঘটনাটি শোনা যাক।
হজরত ওমর (রা.) বলেন, একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট বসেছিলাম, এমন সময় হঠাৎ এক ব্যক্তি আমাদের সামনে উপস্থিত হন, যার কাপড় ছিলো ধবধবে সাদা, চুল ছিলো ভীষণ কালো; তার মাঝে ভ্রমণের কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনতেও পারেনি। এই আগন্তুক মদিনার অধিবাসী হলে সাহাবীদের কেউ না কেউ তাঁকে চিনতেনই। কিন্তু কেউই তাঁকে চিনতে পারলেন না। তিনি অবশ্যই অন্য কোনো জায়গা থেকে এসেছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সফরের কোনো আলামতও তাঁর মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকটে গিয়ে বসে, নিজের হাঁটু তাঁর হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে নিজের হাত তাঁর উরুতে রেখে বললেন, হে মুহাম্মাদ, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন।
মদিনায় বসবাসরত কোনো সাহাবী সাধারণত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এত কাছে এভাবে বসতেন না। তাঁরা তাঁকে সরাসরি নাম ধরেও ডাকতেন না, বরং তাঁরা তাঁকে ইয়া রাসুলাল্লাহ বলে সম্মোধন করতেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইসলাম হচ্ছে এই – তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসুল, সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত আদায় করো, রমযানে সওম সাধনা করো এবং যদি সামর্থ থাকে তবে (আল্লাহর) ঘরের হজ করো।
আগন্তুক ইসলাম সম্পর্কে জানতে চাইলেন। জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের কথা জানিয়ে দিলেন। আমাদের নিজেদেরকে স্বেচ্ছায় আল্লাহর প্রত্যাদেশের কাছে সমর্পন করে দেওয়ার নামই হলো ইসলাম। এখানে বর্ণিত ‘ইসলাম’ হলো ইসলামের বাহ্যিক রূপ। ইসলামকে যদি একটি দেহের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে সেই দেহটি এই পাঁচটি কাঠামোর উপর টিকে আছে। এই পাঁচটি কাঠামোর কোনো একটিও যদি ভেঙে পড়ে তাহলে আমাদের ‘ইসলাম’ নামক দেহটিও ভেঙে পড়বে।
তিনি (অর্থাৎ লোকটি) বললেন, আপনি ঠিক বলেছেন। আমরা বিস্মিত হলাম, সে নিজে তাঁর নিকট জিজ্ঞাসা করেছে, আবার নিজেই তাঁর জবাবকে ঠিক বলে ঘোষণা করছে!
এরপর বললেন, আচ্ছা, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন।
তিনি (অর্থাৎ রাসুল) বললেন, তা হচ্ছে এই – আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসুলগণ ও আখিরাতে বিশ্বাস করা এবং ভাগ্যের ভালো-মন্দকে বিশ্বাস করা।
আগন্তুক নিজেই প্রশ্ন করছেন, আবার তিনি নিজেই বলছেন যে, উত্তর ঠিক হয়েছে! যাই হোক, এরপর তিনি ঈমান সম্পর্কে জানতে চাইলেন। জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ঈমানের ছয়টি স্তম্ভের কথা জানিয়ে দিলেন। কোনো জিনিসকে সত্য বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করার নামই হলো ঈমান। এ এমন এক বিশ্বাস যাতে সন্দেহের লেশমাত্র নেই। একটু আগে ইসলামের যে পাঁচটি স্তম্ভের কথা বলা হয়েছে তা হলো ‘ইসলাম’ নামক দেহের বাহ্যিক রূপ, আর ‘ঈমান’ হলো সেই দেহের রূহ বা আত্মাস্বরূপ। একজন মানুষের দেহ দেখতে যত সুন্দরই হোক না কেন, তার আত্মা যদি দেহ ছেড়ে চলে যায় তবে সে একজন লাশ হয়ে যায়। একইভাবে, আমাদের ইসলামের বাহ্যিক প্রকাশ যতই মনোহর হোক না কেন, সঠিক ঈমানের অধিকারী হতে না পারলে সেই ‘ইসলাম’ যেন মৃত, তা আমাদের কোনো উপকারে আসবে না। [এ্যাবসুলেট এ্যাসেনশিয়াল অব ইসলাম থেকে অনুবাদ শাওন মোহাম্মাদ শাহরিয়ার, ইসলাম, ইমান ও ইহসান, সূত্র- আমার স্পন্দন]
ইহসানের সাথে ইবাদাত : বিশ্বাসের সাথে সাথে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে ইহসানের সাথে, এটা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইহসান কি, এ বিষয়ে হাদিসে পরিষ্কার নির্দেশনা আছে । যেমন— আলোচনার শুরুতে উল্লেখিত হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের শেষাংশে এসেছে, তারপর তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, এখন আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন। উত্তরে রাসূল (স.) বললেন, এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো যেনো তুমি তাকে দেখছ, আর যদি তাকে নাও দেখো, তাহলে অন্তত এটা ভাবো যে, তিনি তো তোমাকে অবশ্যই দেখছেন। [সহিহ মুসলিম]
সুতরাং ইসলামে আমলের নির্দেশনার সাথেও বিশ্বাসের সম্পর্ক প্রগাঢ়। আল্লাহ তায়ালাকে সর্বত্র বিরাজমান জেনে আমল করা এমন এক মানবিক মূলনীতির দিকে মানুষকে আহ্বান করে, যেখানে সে সারা পৃথিবীর সমগ্র দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে কেবল এক স্রষ্টার দাসত্ব স্বীকার করতে পারবে স্বাচ্ছন্দ্যে এবং তার ইবাদত ও কর্ম হবে লৌকিকতা মুক্ত অনাবিল। সামাজিক ও মানবিক অন্যায় থেকে স্বতস্ফূর্তভাবে সে নিজেকে বিরত রাখবে নিজের ইচ্ছাতেই ।
ইসলামের মৌলিক নির্দেশনা : ইসলাম কেবল সত্যের নির্দেশ দেয় এবং সত্যের স্বীকৃতি প্রদান করে; আল্লাহ কর্তৃক রাসূলদের প্রদত্ত ওহীর উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ধর্মীয় বাস্তবতা সাব্যস্ত করে এবং স্বভাবগত উপকারী ও যৌক্তিক বৈজ্ঞানিক বাস্তবতাকে সাথে নিয়ে চলে। আর তা কোনো কারণেই কোনো হক ও সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে না এবং কোনো মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করে না। আর তাতে কোনো বাতিলের প্রচলন সফল হয় না। সুতরাং ইসলাম অপরাপর সকল ধর্মের উপর তদারককারী ও তত্ত্বাবধায়ক।
একারণেই ইসলাম সুন্দর আমল [কর্ম], উত্তম চরিত্র ও জনকল্যাণের নির্দেশ দেয় এবং ন্যায়পরায়ণতা, সম্মান, সম্প্রীতি ও কল্যাণের প্রতি উৎসাহিত করে। এছাড়া ইসলাম দূরে থাকার নির্দেশ দেয় করে সকল প্রকার জুলুম-নির্যাতন, সীমালংঘন ও দুশ্চরিত্র থেকে। যে পরিপূর্ণ বৈশিষ্ট্যকেই নবী ও রাসূলগণ স্বীকৃতি দিয়েছেন, ইসলাম সেই বৈশিষ্ট্যকেই স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যে ধর্মীয় ও পার্থিব কল্যাণের দিকেই কোনো বিধান বা শরীয়ত আহ্বান করেছে, ইসলাম তার প্রতিই উৎসাহিত করেছে; আর প্রতিটি অকল্যাণকর বিষয় থেকেই নিষেধ করেছে ও দূরত্ব বজায় রেখে চলতে নির্দেশ দিয়েছে। ইসলামের আকিদা-বিশ্বাসসমূহ এমনই যে, তা দ্বারা অন্তর পবিত্র হয় ও আত্মা পরিশুদ্ধ হয় এবং তার দ্বারা উত্তম চরিত্র ও সৎকর্মের সৌন্দর্য দৃঢ়মূল হয়। যেমন— আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহর জিকির দ্বারা অন্তর পরিশুদ্ধ হয় । [সূরা রাদ, আয়াত ২৮]
নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবী করতে চাইলে এই কাজগুলো করতেই হবে : ১ – আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ [অর্থাৎ উপাস্য ও চুড়ান্ত বিধানদাতা] নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসুল– এই কথাটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে এবং আমাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে তা অন্যদেরকে বুঝতে দিতে হবে। এই বাক্যের ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমেই একজন অমুসলিম ইসলামে প্রবেশ করে এবং একে প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমেই একজন মুসলিম ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায়।
২ – সাবালক হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নিয়মে আদায় করতে হবে। শেষ বিচারের দিনে আমাদের যাবতীয় কাজের মধ্য থেকে এই নামাযের হিসাবই সবার আগে নেওয়া হবে। আমাদের নামাযের হিসাব সহজ হলে বাকী হিসাবও সহজ হয়ে যাবে, আর নামাযের হিসাব সহজ না হলে বাকী সব হিসাবও কঠিন হয়ে যাবে। উপরন্তু, নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে। [কুরআন ২৯:৪৫] আমাদের নামায আমাদেরকে অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে তখনই বিরত রাখবে যখন আমরা নামাযের হকসমূহ সঠিকভাবে আদায় করবো।
৩ – প্রতি বছর যথাযথ নিয়মে হিসেব করে আমাদের সম্পদের একটি অংশ নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণীর মানুষের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে বন্টন করে দিতে হবে। যাতে ধনৈশ্বর্য্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না হয়। [কুরআন ৫৯:৭] যাকাত আমাদের সম্পদকে পবিত্র করে এবং সেই সাথে সমাজে ধনী ও গরিবের মধ্যকার ব্যবধানকে কমিয়ে আনতেও সাহায্য করে।
৪ – রমজান মাসে প্রতিদিন ভোরের শুরু থেকে নিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নির্দিষ্ট নিয়মে রোযা রাখতে হবে। হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেযগারী [বা তাকওয়া] অর্জন করতে পার। [কুরআন ২:১৮৩] আল্লাহর প্রতি আমাদের ভালোবাসা মিশ্রিত যে ভয় তাকেই তাকওয়া বলে। আমার এই কথায় আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন তো? আমার এই কাজে তিনি সন্তষ্ট হবেন তো? আমাদের প্রতিটি কথা বা কাজের আগে আমরা যদি এভাবে চিন্তা করি এবং সেভাবেই আমরা আমাদের কথা ও কাজকে সাজাই তাহলে আশা করা যায় যে আমরা তাকওয়ার গুণটি অর্জন করতে পেরেছি। রমজানের রোযার হকসমূহ সঠিকভাবে আদায় করতে পারলে এই মহৎ গুণটি অর্জন করা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।
৫ – সামর্থ থাকলে জীবনে অন্তত একবার হজ করতে হবে। আল্লাহর ঘর কাবাকে নিজের চোখে দেখতে পারার অপার্থিব অনুভূতি, আরাফাতের ময়দানে প্রখর রোদের মধ্যে অশ্রুসিক্ত নয়নে নিজেকে ভিখিরির মতো আল্লাহর কাছে সঁপে দিতে পারা, মুযদালিফায় খোলা আকাশের নিচে মরুর প্রান্তরে লক্ষ লক্ষ মানুষের সাথে রাত কাটানো, মিনায় তাঁবুর মধ্যে অবস্থান ও লক্ষ লক্ষ মানুষের ইবাদাত – এসব প্রত্যক্ষ করার পর বিবেকসম্পন্ন মানুষ মাত্রই তার নিজের ক্ষুদ্রতাকে অনুভব করতে শুরু করে। আরাফাতের ময়দান যেন হাশরের ময়দানেরই একটি ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি। মুযদালিফায় রাত্রি যাপন যেন মাটির মানুষকে মাটিতে নামিয়ে আনার একটি শিক্ষালয়। মিনার প্রান্তর যেন মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধকে জাগাবার একটি উত্তম স্থান। কাবা ঘরের তাওয়াফ যেন আমাদের জীবনের আসল উদ্দেশ্য, অর্থাৎ কেবলমাত্র আল্লাহকেই আমাদের সবকিছুর কেন্দ্রে রাখতে হবে, এই কথাটি মনে করিয়ে দেয়। হজের হকসমূহ সঠিকভাবে আদায় করে হজ পালন করতে পারলে তা আমাদের পরবর্তী জীবনের গতিধারাকে ইতিবাচকভাবে বদলে দেবেই। আর তেমনটি হয়ে থাকলে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, মাবরুর হজের প্রতিদান জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয় [বুখারি]।
এই পাঁচটি জিনিসকে জেনে-বুঝে সঠিকভাবে আঁকড়ে ধরতে পারলে ইসলামের বাকী বিধানসমূহ মানাও আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। আর ইসলামের যাবতীয় বিধানাবলী মানার মাধ্যমেই আমাদের ‘ইসলাম’ নামক দেহটি পরিপূর্ণতা পাবে। [এ্যাবসুলেট এ্যাসেনশিয়াল অব ইসলাম থেকে অনুবাদ শাওন মোহাম্মাদ শাহরিয়ার, ইসলাম, ইমান ও ইহসান, সূত্র- আমার স্পন্দন]
ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়গুলো : যেসব কারণে ইসলাম নষ্ট হয়ে যায়, এর সংখ্যা অনেক, সবচেয়ে মারাত্মক এবং অধিক সংঘটিত হয় এমন ১০ টি কাজ নিম্নরূপ— ১. আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে শিরক করা। শিরকের গুনাহ ক্ষমা করা হয় না এবং মৃত্যুর আগে যদি গ্রহণযোগ্য তওবা না করে মারা যায় তাহলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামি হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা কখনো (সে গুনাহ) মাফ করবেন না (যেখানে) তাঁর সাথে কাউকে শরিক করা হয়। এ ছাড়া অন্য সব গুনাহ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। [সূরা আন-নিসা : ৪৮] যেমন- কোনো জিন বা কবরবাসীর জন্য জবেহ করা, সাদাকাহ করা প্রভৃতি।
২. যে ব্যক্তি নিজের মাঝে আর আল্লাহর মাঝে এমন মাধ্যম গ্রহণ করে, যাদেরকে সে ডাকে, যাদের কাছে সুপারিশ চায় এবং যাদের ওপর নির্ভর করে, সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির।
৩. যে ব্যক্তি মুশরিকদের কাফির বলে না অথবা তাদের কাফির হওয়ার ব্যপারে সন্দেহ পোষণ করে অথবা তাদের মতাদর্শকে সত্য বলে মনে করে, সেও কাফির।
৪. যে ব্যক্তি এ বিশ্বাস রাখবে যে, মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ ছাড়া অন্য কারো আদর্শ বেশি পরিপূর্ণ অথবা তাঁর মাধ্যমে আগত বিধানের চেয়ে অন্য কারো বিধান উত্তম, সে ব্যক্তি কাফির।
৫. রাসূল (সা.) যে আদর্শ নিয়ে আগমন করেছেন (সহিহ সূত্রে প্রমাণিত) তার কোনো কিছুকে কেউ ঘৃণা করলে সে কাফির হয়ে যাবে যদিও সে তার ওপর আমল করে। আল্লাহর বাণী, এর কারণ হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা (তাদের জন্য) যা কিছু পাঠিয়েছেন তারা তা অপছন্দ করেছে, ফলে আল্লাহ তায়ালাও তাদের যাবতীয় কর্ম বিনষ্ট করে দিয়েছেন। [সূরা মুহাম্মদ : ৯]
৬. আল্লাহর দ্বীনের কোনো কিছুকে অথবা তাঁর সাওয়াবকে অথবা তার শাস্তিকে যে ব্যক্তি ঠাট্টা করবে সে কাফির হয়ে যাবে। এ মর্মে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- তুমি [তাদের] বলো, তোমরা কি আল্লাহ তায়ালা, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে বিদ্রূপ করছিলে? তোমরা দোষ ছাড়ানোর চেষ্টা করো না, ঈমান আনার পর তোমরা পুনরায় কাফির হয়ে গিয়েছ। [আত-তাওবা : ৬৫-৬৬]
৭. যে ব্যক্তি জাদু করবে অথবা জাদুর প্রতি ঈমান আনবে, সে কাফির হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- আর (হারুত ও মারুত ফেরেশতাদ্বয়) যখনই কাউকে ঐ বিষয়ের শিক্ষা দিত, তখন প্রথমেই স্পষ্টভাবে সাবধান করে দিত যে, দেখো আমরা এক পরীক্ষা মাত্র, তুমি কুফরি করো না। [আল-বাকারাহ : ১০২]
৮. যে ব্যক্তি মুসলিমদের বিপক্ষে কাফিরদের পক্ষে সাহায্য সহযোগিতা করবে সে কাফির হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে বন্ধু বানাবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না। [আল-মায়িদাহ : ৫১]
৯. যে ব্যক্তি এরূপ বিশ্বাস রাখবে যে, কোনো কোনো ব্যক্তির জন্য রাসূল (সা.) -এর অনুসরণ করা ওয়াজিব নয় এবং তার জন্য তাঁর শারিয়ত থেকে বেরিয়ে যাওয়া জায়েজ আছে সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- যদি কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবন বিধান অনুসন্ধান করে তবে তার কাছ থেকে সে [উদ্ভাবিত] ব্যবসা কখনো গ্রহণ করা হবে না। [আল-ইমরান : ৮৫]
১০. যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তা শিক্ষা গ্রহণ করবে না এবং তার ওপর আমলও করবে না সে ব্যক্তিও ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- তার চাইতে বড় জালেম আর কে হতে পারে যে ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের আয়াতসমূহ দ্বারা নসিহত করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, অবশ্যই আমি নাফরমানদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেবো। [আস-সাজদাহ্ : ২২]
ইসলাম বিনষ্টকারী কারণগুলোর সব কটিই ধ্বংসাত্মক হওয়ার দিক থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের এবং সংঘটিত হওয়ার দিক থেকেও অধিক সহজ। অতএব প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য হবে এগুলোকে পরিহার করে চলা এবং এতে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকা। [নিউ মুসলিম গাইড বাই নিউ মুসলিম ডট ইনফো] AR / Hakaluki