মইনুদ্দিন সিদ্দিক, রাজনগর :: মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলাধীন কামারচাক ইউনিয়নে গণমাধ্যম কর্মীর উপর সন্ত্রাসী হামলার বিচার ৫১ দিন পরে গ্রাম আদালতে জরিমানা ও পানিসমেন্ট ছাড়া শুধু ক্ষমা!
গত ২২ শে জুলাই ২০২০ইং বুধবার রাতে আলী হোসেন (১৮) নামের ছেলে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে কোথায় আছেন? কখন বাড়িতে আসবেন? এসব জিজ্ঞেস করে ফোন বন্ধ রাখে, এবং তাৎক্ষনিক সিম ডিএক্টিভেট করে। আমি তখন রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের তারাপাশা বাজার থেকে ফোনের দেয়া সময় অনুযায়ী বাড়িতে আসার পথে রাত আনুমানিক ৯-১০ টা বাজে। কামারচাকের ৮ নং ওয়ার্ড চান্দখার হাবেলী গ্রামের প্রবেশপথে ঢুকতেই ৪-৫ জন বখাটে সত্রাস অন্ধকারে হামলায় অংশগ্রহণ করে, এরই মধ্যে পিছন থেকে অতর্কিত হামলাকারী সোলেমান আহমদ(২৪)কে দেখতে পাই। তাদের ২ জনকে সরাসরি চিনতে পারি। এবং রাস্তা থেকে পানিতে পরে চিৎকার করি ।আমার চিৎকার শুনে আশপাশের মানুষ বাহির হয় এবং হামলাকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়।এসময় শারিরীক অবস্থার অবনতি দেখা দিলে উপস্থিত কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী – আমিন আল হাসান, মিজানুর রহমান চৌধুরী রাসেল, জুবের আহমদ, কামরুল ইসলাম দুলাল, নিজাম আহমদ রাজনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা প্রদান করেন।এবং পরবর্তীতে মৌলভীবাজারে চিকিৎসা গ্রহন করি। এদিকে আমি ঘটনাস্থলে থেকেই স্হানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যান কে বিষয়টি অবগত করি। তারা আমাকে দ্রুত সামাজিক সালিশের মাধ্যমে সমাধান করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।আমি তাদের এ আশ্বস্ত পেয়ে সামাজিকভাবে সমাধানে আগ্রহ প্রকাশ করি।এবং আইনি সহযোগিতা চাইতে বিলম্ব করি। এভাবে আজকাল আজকাল হয়ে গড়াতে লাগলো দিনের পর দিন। প্রতিদিনই আশ্বস্ত হই আবার সন্ধ্যায় নিরাপত্তা হীনতায় বাড়িতে ফিরে যেতে হয়।
একাধারে যোগাযোগের পর ২৬ শে জুলাই স্হানীয় চেয়ারম্যান সাহেবকে ফোন দিলে তিনি আমাকে ঈদের পূর্বেই সালিশের মাধ্যমে সমাধানের কথা জানান তখন ঈদের ৭ দিন বাকি। আমি এ কথা শুনে তখনও আইনি সহযোগিতা চাইনি। ধৈর্য ধরতে লাগলাম…গেল ঈদ…এভাবে ঈদ গেল, তারপর বাবার অসুস্থতা লেগেই থাকলো।বাবা হার্ট সার্জারী করেছিলেন কয়েক বছর পূর্বে, বাবার বিশ্বাস ছিল স্হানীয় জনপ্রতিনিধিরা এটা ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন। পাশাপাশি আমার আত্নীয় স্বজনরা বিশ্বাস করতো চেয়ারম্যান সাহেব ন্যায় বিচারক। কিন্তু কে জানতো ভাগ্যে এমন নির্মম পরিহাস আসবে। নির্মানাধীন পশ্চিম চান্দখার হাবেলী মসজিদ আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াবে এটা কারও জানা ছিল না। এখানে শতবছর পূর্বে মসজিদ নির্মাণের অছিয়তনামা ছিল। পশ্চিম এলাকার মানুষের জন্য সর্বোপরি সুবিধাজনক স্থান পশ্চিম চান্দখার হাবেলী মসজিদ। পূর্বে ও একাধিকবার বাঁশ-কাঠ দিয়ে নির্মানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলাম, আর্থিক অনুদান সংকটের কারণে অসম্ভব হয়েছিল। সকলের একাত্মতায় এবছরের প্রথম দিকে এটা নির্মাণের উদ্যোগ নেন তছলিম উল্লাহ সাহেব, সাবেক মেম্বার ৮নং ওয়ার্ড। যিনি এ ওয়ার্ডের সামাজিক প্রয়োজনে দিয়েছেন যায়গা-জমি সহ এক সময় বিভিন্ন ধরনের অবদান রেখেছিলেন। তিনি হঠাৎ একটা আলোচনার আয়োজন করেন এবং উদ্যোগ প্রকাশ করেন। উনার এ কাজ মহান আল্লাহ তায়ালা কবুল করে নেন।এবং সাথে সাথে অনেকেই একমত পোষণ করে সহযোগিতার হাত বাড়ান। মিটিং এ কমিটি গঠন হয় সভাপতি আলহাজ্ব হাফেজ লাল মিয়া সাহেব।সম্পাদক এলাইস মিয়া সাহেব। অর্থ সম্পাদক আলাউদ্দিন সাহেব। তখন থেকে কাজ শুরু হয়, এপর্যন্ত কাজ বিদ্দমান রয়েছে। ৫ হাজার টাকা সহযোগিতার…..এরইমধ্যে বাংলাদেশ সরকার করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার মূহুর্তে মসজিদের সভাপতির মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা সহযোগিতার কার্যক্রম শুরু করে। তখন আমি নির্মাণাধীন মসজিদের নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য অনুরোধ জানাই। তালিকাভুক্ত না হলেও আমরা দুঃখিত হইনি। কমিটি থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, যারা মসজিদের আশপাশের রয়েছি সবাই ১০০-২০০ টাকা চাদা প্রতি মাসে জমা করবো এবং এভাবেই মসজিদ নামাজ পড়ার উপযোগী করবো।
ছোট ছেলে মেয়েরাও ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, বিগত ৪-৫ বছর থেকে আমার বাড়িতে ধর্মীয় শিক্ষা মক্তব পড়ান আমার বয়স্ক বাবা।অন্যদিকে ঈদের ১৬ দিন পরে যোগাযোগ করেন স্হানীয় চেয়ারম্যান সাহেব তিনি শুক্র-শনিবার বসার ব্যবস্হার কথা জানান। তখন আমি সময় চাই ৩-৪ হাতে রেখে তারিখ ধার্য করার জন্য। তারপর গড়াতে লাগলো এভাবে ৮-১০ দিন পার হয়ে গেল।এর পর পেলাম প্রথম একটা সুযোগ ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং সামাজিকভাবে একটা ব্যবস্হা হবে এমন আশ্বস্ততা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান আমাকে তারিখ দেন ০১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা পরে । এরই মধ্যে আমি তারিখ পাওয়ার পরে ২৮ আগষ্ট জানাই রাত্রে দেয়া নির্ধারিত সময়কে পরিবর্তন করে দিনে শালিসের সুযোগ দেয়ার জন্য ।৩১ শে আগস্ট….৩১ শে আগস্ট রাত্রে আমাকে জানান, মেম্বার সাহেবের সাথে কথা বলে সময় জানাবেন। তখন মেম্বার সাহেবের মোবাইল বন্ধ থাকায় রাত ৮ ঘটিকায় জানান, ১ সেপ্টেম্বর(রাত – বিকালে) শালিসের সিদ্ধান্তের কথা।তাতে আমি উল্লেখিত সিদ্ধান্তে রাজি হই। শালিস হিসাবে সয়ং চেয়ারম্যান সাহেব’ই ছিলেন। দাওয়াতের জন্য স্হানীয় মেম্বার সাহেবের সাথে কথা হলে তিনি জানান,জ্বর জনিত সমস্যায় রয়েছেন।চেয়ারম্যান সাহেব বিচার পরিচালনা করবেন আমি সিয়র হই তিনি অসুস্থতা নিয়ে আসতে পারবেন না। আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেবের দেয়া সময় অনুযায়ী মুরব্বিয়ান সহ শুভাকাঙ্ক্ষীদের দাওয়াত করি এবং তাদেরকে আমার উপর পরিকল্পিত হামলার কথা জানাই। যথাযথ সময় অনুযায়ী সবাই উপস্থিত হলে আমাকে তারিখ দেয়া হয় আগামী ১২ সেপ্টেম্বরে বিচার হবে।কারন জানতে চাইলে চেয়ারম্যান সাহেব বলেন, বিচারের শালিস মেম্বার সাহেব, তিনি উপস্থিত না থাকায় বিচার করা অশুভনীয়। তখন আব্দুল গফ্ফার মায়া (চাচা) সাবেক চেয়ারম্যান , তিনি বলেন এতোদিন যখন অপেক্ষা করেছো তাহলে ১২ তারিখ অপেক্ষা করতে পারবে। আমি কনফিউশনে রয়ে গেলাম।
২২শে জুলাই সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়ে দ্রুতভাবে বিচার হওয়ার আশ্বাসে ১ মাস ১০ দিন পরে আলোর মুখে আসার পূর্বই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। পাশাপাশি পরিকল্পিত দলের সদস্যরা কেউ কেউ বলছেন, এটা কোনো বিষয় নয়,কিছুই হয়নি সামান্য বিষয় নিয়ে সবাই কষ্ট পাক এটা তারা চান না।তারা চান চুপচাপ ঘটনাকারীদেরকে দামাচাপার মাধ্যমে উদ্ধার করতে।১২ই সেপ্টেম্বর…..শুরু হলো ১২ সেপ্টেম্বর ১ম আলোচনা বয়টক। বাদী- মঈনুদ্দিন সিদ্দিক। বিবাদী হুসেন আহমদ+ সোলেমান আহমদ। বাদী সাক্ষী – রফিক মিয়া।বিবাদী সাক্ষী- আলমাস মিয়া। উপস্থিত মুন্সিবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, টেংরা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু খান, কামারচাক ইউপি চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিম। মো. মশাহিদ উদ্দিন, মো.শাহেদ মেম্বার, মো.আনকার মিয়া, মো. জিয়াউর রহমান জিয়া মেম্বার, মো.আব্দুল খালিক মেম্বার, মো. শহিদুর রহমান মেম্বার, হাজী আব্দুল খালিক, শাহিন আহমদ, মো.বাবর আহমদ, মো.রেনু মাস্টার, মো. তছলিম উল্লাহ মেম্বার, মো.আছাদ ডাক্তার প্রমুখ শালিস পরিচালক। এছাড়াও ২ শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে কার্যক্রম চলে। তারা আলোচনা পর্যালোচনা করে অভিযোক্ত ২ জনকে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দিলে হুসেন আহমদ এবং সোলেমান আহমদ ক্ষমা চায়। কেউ কেউ বলছেন, এধরণের হামলায় পানিশমেন্ট ছাড়া এভাবেই সমাপ্তি হওয়ার নজির খুব’ই অদ্ভুত দৃষ্টান্ত। তবেও আমি চাই তারা ভালো হয়ে উঠুক। তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে বাকি জীবন শুধরে নিবে।অপরাধ চক্র থেকে সরে থাকুক।তাদের জন্য শুভ কামনা করি। মহান সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে হেদায়াত নছিব করুক। শতশত মানুষের অধিকারের চিত্র আমার বিভিন্ন লেখেনির মাধ্যমে উঠে আসে। আমি অসহায় বঞ্চিত মানুষের পাশে সর্বদাই সহযোগিতার হাত বাড়াই। এটাই আমার কর্ম,মানবসেবার মাধ্যমে তৃপ্তি অনুভব করি। তবে আমি ২২শে জুলাই থেকে নিরাপত্তা হীনতার ভুগছি। উল্লেখিত নামের মানুষরা সহ তাদের সহযোগিরা যে কোনো সময় আমার জান মালের ক্ষতি সাধন করতে পারে।
বিঃদ্রঃ কাউকে উদ্দেশ্য করে নয়। একান্ত ব্যক্তিগত জীবন গল্প। এটা পড়ে অনেকেই বাস্তবতা বুঝতে পারবেন। সচেতন হতে পারেন। অপরাধ থেকে দূরে থাকবেন, সুস্হ সুন্দর জীবন গড়ুন। জীবনে কাউকে কষ্ট দিয়ে সুখি হতে পারবেন না। বিশ্বাস না হলে ইতিহাস দেখুন।
হাকালুকি/বায়ো