• ১৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৩শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

মহামারীর অতীত বর্তমান, পর্ব ২ – খালেদ মাসুদ । হাকালুকি

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০
মহামারীর অতীত বর্তমান, পর্ব ২ – খালেদ মাসুদ । হাকালুকি

ইতিহাসের যেমন ধারাবাহিকতা আছে,তেমনি মহামারীরও ধারাবাহিকতা আছে।সময়ের সাথে এসেছে,নিয়ে গেছে লক্ষ্য প্রাণ।কখনও এশিয়া থেকে কখনও ইউরোপ থেকে কখনওবা আফ্রিকা থেকে ছড়িয়েছে মহামারী। 
১,কলেরাঃআজ থেকে প্রায় দুশত বছর আগে ১৮১৭ সালে পৃথিবীর বুকে হানা দেয় আরেক ঘাতক ভাইরাস। যার নাম কলেরা।রাশিয়া থেকে যার বিস্তার শুরু হয়।পানিবাহীত এই কলেরা ভাইরাস। যাতে প্রাণ হারায়রপ্রায় কয়েকলক্ষ্য মানুষ। কলেরা ছড়িয়ে পড়ে ব্রিটিশ সেনাদের মধ্যে।যার ফলে তা ছড়িয়ে যায় ভারতে রুপ নেয় মারাত্মক আকার।স্পেন, জার্মান,ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া মালেশিয়া আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে কলেরা।দুশো বছর আগে কলেরায় মারা যায় ২২-২৩ লক্ষ্য মানুষ।এর মধ্যে এশিয়াতে ১লক্ষ্য+ মানুষের প্রাণ হানি ঘটে।এখানেই শেষ নয়, পরবর্তী আরও দেড় শ বছর ধরে কলেরা বিভিন্ন সময়ে কয়েক দফায় মহামারি আকারে দেখা দিয়েছিল।গত দুশো বছরে সাত বার কলেরা মহামারি আকারে দেখা যায়
১৮৮৩ সালে ৪র্থ বার হজ্বের সময়ে আধুনিক সৌদি আরবে কলেরার প্রাদুর্ভাব ঘটে। এ ঘটনায় ৩০ থেকে ৯০ হাজার হাজী কলেরায় মারা যায়। পাসিনি (Pacini), কোচ (Koch), লুই পাস্তুর (Lois Pasteur) ও ফেরানের (Ferran) গবেষণা সূত্র ধরে অবশেষে ১৮৮৫ সালে কলেরার প্রতিষেধক আবিস্কৃত হয়। 
১৯১০ সালে মধ্য এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ ও রাশিয়ায় ৬ষ্ঠ বারে কলেরায় মারা যায় ৮ লক্ষাধিক লোক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, এখনও বিশ্বে প্রতি বছর ১৩ থেকে ৪০ লক্ষ মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়, মারা যায় ২১ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার।
২ঃপ্লেগঃ৪৩০ খ্রিষ্টপূর্ব: এপিডেমিক অব এথেন্সখ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০ অব্দে স্পার্টানদের সাথে গ্রিকদের যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছিল না গ্রিকরা। তার ওপর ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হয়ে আসে ‘দ্য প্লেগ অব এথেন্স’ নামে পরিচিত পৃথিবীর প্রথম প্লেগ মহামারী।এই মহামারী সম্পর্কে তেমন তথ্য পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তা,গ্রিক ইতিহাসবিদ থুসিডাইডসের রচনাংশ ‘হিস্ট্রি অব দ্য পেলোপনেসিয়ান ওয়্যার’ থেকে পাওয়া। অবশ্য থুসিডাইডসের তথ্য নিয়ে খুব একটি সন্দেহ নেই কোনো ইতিহাসবিদের মনে। কারণ থুসিডাইডস এ কুখ্যাত প্লেগ নিজ চোখেই দেখেছেন, যা গ্রামের পর গ্রাম জনমানবহীন করে দিয়েছিল।
আবার,আর একদল ইতিহাসবিদের মতে, ৪৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এথেন্সে মহামারী হয়েছিল টাইফয়েড, টাইফাস জ্বর, গুটিবসন্ত কিংবা অ্যানথ্রাক্সে। তবে এ দলের বেশিরভাগ মনে করেন, মহামারী হয়েছিল গুটিবসন্তের জন্য। রোগটি ভেরিওলা ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ায়। সংক্রামক এ রোগটি একজন মানুষের ত্বকের সাথে আরেকজনের স্পর্শে ছড়ায়। এমনকি বাতাসের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়ায় এবং এ কারণে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০ এ গ্রিসের এথেন্সে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়, যা ছিল ওই নগরের ২০ শতাংশ মানুষ।
৫৪১ খ্রিষ্টাব্দ দ্য প্লেগ অব জাস্টিনিয়ানবাইজান্টাইন।সম্রাট জাস্টিনিয়ানের শাসনামলে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ মহামারীর কারণে। ৫৪০-৫৪১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মিশরে এক ভয়ানক প্লেগের উৎপত্তি ঘটে।
এবার এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে ইঁদুরের মাধ্যমে । তৎকালীন পৃথিবীতে মিশরই ছিল সমগ্র ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্যশস্যের জোগান। ফলে এখানে সৃষ্ট রোগ সহজেই পূর্ব থেকে পশ্চিমে ছড়িয়ে যায়। রোগের প্রথম আক্রমণটা ছিল বাইজান্টাইনের রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে (বর্তমান ইস্তাম্বুল)। কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে, মহামারীর চূড়ান্ত পর্যায়ে সেখানে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার মানুষ মারা যেত!প্রায় ৫০ বছর টিকে থাকা এ মহামারী আড়াই কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। তবে কিছু কিছু উৎসে সংখ্যাটা ১০ কোটিতেও ঠেকেছে। প্রাচীন পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক এ মহামারীই ইউরোপে ‘ডার্ক এজ’র সূচনা করেছিল।
১৩৩৪ সালঃদ্য গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন হিসেবে স্বীকৃত ১৩৩৪ সালের প্লেগ আসলে ছড়ায় চীন থেকে। এরপর ইতালির ফ্লোরেন্স শহরেই ছয় মাসে প্লেগে মারা যায় ৯০ হাজার মানুষ। পুরো ইউরোপজুড়ে মারা যায় আড়াই কোটি মানুষ।
১৩৪৭-৫১ খ্রিষ্টাব্দঃ সময়কালই ছিল ব্ল্যাক ডেথের সবচেয়ে বিধ্বংসী সময়। এ সময় ইউরোপের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রাণবায়ু কেড়ে নেয় এ মহামারী। তবে এ অভিশপ্ত মহামারীর প্রভাব টিকে ছিল অন্তত ২০০ বছর। ইতিহাসবিদদের মতে, এ ২০০ বছরে অন্তত ১০ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন
১৫১৯ সাল: স্মলপক্স এপিডেমিক অব মেক্সিকো বর্তমান মেক্সিকোতে ১৫১৯ সালে স্মলপক্স ছড়িয়ে পড়লে দুই বছরে মারা যায় প্রায় ৮০ লাখ মানুষ।
১৬৩৩ সাল: স্মলপক্স এপিডেমিক অব আমেরিকাফ্রান্স, গ্রেট বৃটেন ও নেদারল্যান্ডসবাসীর মাধ্যমে ১৬৩৩ সালে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে স্মলপক্স ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রায় ২ কোটি মানুষ মারা যায় বলে দাবি করেন ইতিহাসবিদরা।
১৭৯৩ সাল: ইয়েলো ফিভার এপিডেমিক অব আমেরিকা আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ায় ১৭৯৩ সালে ইয়েলো ফিভার মহামারী আকার ধারণ করে। এতে নগরের ১০ ভাগের এক ভাগ, প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ মারা যায়।
১৮৬০ সাল: দ্য থার্ড প্লেগ প্যানডেমিকইতিহাসে সবচেয়ে বিস্তৃত আকারে প্লেগের প্রাদুর্ভাব ঘটে মোটামুটি ৩ বার। তৃতীয়টির উৎপত্তি ১৯ শতকে চীনে, যখন বিশ্ববাণিজ্যে ভালোরকম প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে দেশটি। ইউয়ান নামক একটি ছোট্ট গ্রামে প্রথম এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ক্রমে তা বিস্তার লাভ করতে করতে হংকং আর গুয়াংঝু প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে, যে শহরগুলোর সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরাসরি বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল। ফলে প্লেগ ছড়িয়ে যায় ভারত, আফ্রিকা, ইকুয়েডর, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও। প্রায় দুই দশক স্থায়ী এ মহামারীতে প্রাণ হারায় ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ।
১৯১০ সাল: দ্য প্লেগ এপিডেমিক অব ফার্স্ট ডিকেডবিশ শতকের সবচেয়ে বড় প্লেগ মহামারী দেখা দেয় ১৯১০ সালে। চীনের মাঞ্চুরিয়ায় দুই বছরে মারা যায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। এটি চতুর্থবার প্লেগের মহামারী হলেও তা বিস্তীর্ণভাবে ছড়ায়নি।
(চলবে)[সুত্রঃইন্টারনেট]

June 2025
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930