• ২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৬শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত আগস্ট ২১, ২০২০
সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত

একদিন জিবরীল আ. রাসুলুল্লাহ সা. এর কাছে বসা ছিলেন। জিবরীল আ. রাসুল সা. কে বললেন ‘আজ আকাশের একটি দরজা খুলে গেছে যা এর আগে কখনও খোলা হয় নি, আর সে দরজা দিয়ে এমন একজন ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেছেন যিনি এর আগে কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেন নি।’ এমন সময় সেই ফেরেশতা বেদুঈন আরবের বেশে রাসুল সা. এর কাছে এসে বললেন ‘আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলিল্লাহ, আমি আপনার কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছি আপাদমস্তক দুটি নূরের। যা এর আগে কোনো রাসুলকে দেয়া হয় নি।’ রাসুলুল্লাহ সা. জিজ্ঞেস করলেন ‘তা কি?’ জবাবে সেই ফেরেশতা বললেন নূর দুটি হলো ‘ফাতেহাতুন কিতাব অর্থাৎ সুরা ফাতেহা আর সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত।’
এ দুটি আয়াতের রয়েছে বিশেষ ফজিলত। নিয়মিত এ অংশের আমল বান্দাকে নানা বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবে। জান্নাতের পথও সুগম করবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘ইয়া রাসুলিল্লাহ, কোরআনের কোন সুরা সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান? তিনি বললেন, সুরা এখলাস। এরপর আবার বললেন, কোরআনের কোন আয়াতটি মর্যাদাবান? তিনি বললেন, আয়াতুল কুরসি। এরপর আবার বলেন, আপনি কোন আয়াতকে পছন্দ করেন, যা দ্বারা আপনার ও আপনার উম্মত লাভবান হবে। নবীজি সা. বললেন, সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত। 

সহিহ্ মুসলিমে এ দুটি আয়াতের ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, ‘এ দুটি আয়াত রাসুল সা. কে মিরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে আসমানে দান করা হয়েছে।’

বাংলা উচ্চারণঃ “২৮৫-আমানার রাসুলু বিমা উনঝিলা ইলাইহি মিররাব্বিহি ওয়াল মুমিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালা ইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি লা নুফাররিকু বাইনা আহাদিমমির রুসুলিহি। ওয়া কালু সামিনা ওয়া আতানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির।
২৮৬- লা ইউকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা–লাহা মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাসাবাত–রাব্বানা লা তুআখিজনা ইন-নাসিনা আও আখতানা–রাব্বানা ওয়া লা তাহমিল আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহু আলাল্লাজিনা মিং ক্বাবলিনা– রাব্বানা ওয়া লা তুহাম্মিলনা মা লা তাকাতা লানা বিহি–ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা– আংতা মাওলানা ফাংসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন।’ (সুরা বাকারা)

এ দুটি আয়াতের অর্থ হচ্ছে রাসুল ইমান এনেছেন যেসব বিষয়ের ওপর তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা কিছু তাঁর প্রতি নাজিল করা হয়েছে এবং মুসলমানেরা ও তারা সবাই ইমান এনেছে আল্লাহর প্রতি, আর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসুলদের প্রতি। (তারা বলে) আমরা তার নবীদের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না, আর তারা বলে আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা আপনার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা আপনারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না, সে তাই পায়, যা সে উপার্জন করে এবং তার ওপর তাই বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের পরওয়ারদেগার! যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি তাহলে আমাদের অপরাধী করবেন না। হে আমাদের প্রভু আর আমাদের ওপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর করেছেন, হে আমাদের রব! আর আমাদের দ্বারা ওই বোঝা বহন করাবেন না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের গুনাহ মাফ করে দিন, আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। আপনিই আমাদের মাওলা। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন।

সুরা বাকারার শেষ আয়াত দুটি নিয়ে হাদিসে আরও অনেক ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। এ দুটি আয়াতের ফজিলত প্রসঙ্গে নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে এ দুটি আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য এটাই যথেষ্ট।’

জুবাইর ইবনু নুফাইর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুরা আল-বাকারাকে আল্লাহ তাআলা এমন দুটি আয়াত দ্বারা শেষ করেছেন, যা আমাকে আল্লাহর আরশের নিচের ভান্ডার থেকে দান করা হয়েছে। তাই তোমরা এ আয়াতগুলো শিখবে। তোমাদের স্ত্রীদেরও শেখাবে। কারণ এ আয়াতগুলো হচ্ছে রহমত, (আল্লাহর) নৈকট্য লাভের উপায় ও (দীন দুনিয়ার সকল) কল্যাণলাভের দোয়া।’ [মিশকাতুল মাসাবিহ: ২১৭৩]

বদরি সাহাবি আবু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুরা বাকারার শেষে এমন দুটি আয়াত রয়েছে, যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াত দুটি তিলাওয়াত করবে, তার জন্য এ আয়াত দুটোই যথেষ্ট। অর্থাৎ রাতে কোরআন মজিদ তিলাওয়াত করার যে হক রয়েছে, কমপক্ষে সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত তিলাওয়াত করলে তার জন্য তা যথেষ্ট।’ [সহিহ্ বুখারি: ৪০০৮]

হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘আমার মতে যার সামান্য বুদ্ধিজ্ঞান আছে, সে এ দুটি আয়াত পাঠ করা ছাড়া নিদ্রা যাবে না।’

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যখন আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তিনটি জিনিস দান করা হয়। ১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ২. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, ৩. এ উম্মতের মধ্যে যারা শিরক করে না, তাদের কবিরা গুনাহ মাফ হওয়ার সুসংবাদ।’ [মুসলিম, তাফসিরে মাজহারি]

March 2025
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031