ফ্রান্সে সরকারী মদদে ইসলাম ও রাসুল বিদ্বেষের ঘটনায় ফেসবুকে ঢালাওভাবে শুরু হয়েছে ‘উই লাভ মুহাম্মাদ চ্যালেন্জ’ নামে হ্যাশট্যাগ।
এ বিষয়ে আমার মতামত পরিষ্কার সামাজিক মাধ্যমে ধর্মীয় রাজনৈতিক গুজব প্রতিহত করেন।
ধর্মীয় রাজনৈতিক গুজব একসাথে বললাম কারণ ধর্মীয় ইস্যু বেশীরভাগ রাজনৈতিক ফায়দা লাভের কারণেই তৈরি হয়ে থাকে। বিশ্বাস হয় না? অনেক জায়গায় পড়লাম, ফ্রান্স ইচ্ছা করেই ওই শিক্ষক হত্যা করিয়ে আবার শার্লি এবদো ম্যাগাজিনে নবীর কার্টুন ছাপিয়ে একটা ইস্যু তৈরি করছে। যে শার্লি এবদো পাঁচ বছর আগে নবীজীকে নিয়ে কার্টুন বানিয়ে মুসলিম বিশ্বকে উপহাস করেছিল তারা আবার পাঁচ বছর পরে কার্টুন ছাপিয়ে একই ইস্যু তৈরি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার উদ্দেশ্য কী? প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের বা কী উদ্দেশ্য প্রকাশ্যে মুসলিম ঐক্য বিরোধী ভাষণ দেয়ার? ফ্রান্সের পুলিশ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে মুসলিম ইমিগ্র্যন্টদের উপর ঢালাওভাবে হামলা নির্যাতন শুরু করেছে? সব এক সুতায় গাঁথা নয়তো? নাকি এসবই নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা?
আসলে ফ্রান্সে জাতীয়তাবাদী ঐক্যের জন্য মুসলিম জনশক্তি একটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই উপনিবেশ আমল থেকে। উত্তর আফ্রিকার আলজেরিয়া, লিবিয়া, মরোক্কো, তিউনিসিয়া বিশাল অঞ্চল জুড়ে ফ্রান্স শতবছর ব্যাপী উপনিবেশ শাসনামল থেকেই হাজার হাজার মুসলিম পরিবার ফ্রান্সে অভিবাসী হিসেবে পাড়ি জমিয়েছে। সময়ের বিবর্তনে হাজার লাখ হয়েছে, লাখ হয়েছে কোটি। সিরিয়া যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতায়ও লাখ লাখ তরুন ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়েছে। মানবিক দেশ হিসেবে তারা অভিবাসিদের আশ্রয় দিলেও, কর্মসংস্থান ও ভাতার নিশ্চয়তা কতদিন দিবে? করোনা পরিস্থিতি মন্দা সামলে কবে স্বাভাবিক অর্থনীতিতে ফিরবে দেশটি? এর মধ্যে মুসলিমদের ঐক্য, অন্যান্য দেশ থেকে মসজিদ ও কমিউনিটি ভিত্তিক চাঁদা সংগ্রহ করে ঐক্য ও ওয়েলফেয়ার গঠনকে মোটেও ভালো চোখে দেখছে না বামপন্থী ম্যাক্রন প্রশাসন। তাই ম্যাক্রন মিয়া সরাসরিই এর বিরুদ্ধে কথা বলছে। নবীজীর কার্টুন প্রচার করছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলে, বলছে আরো করবে। পশ্চিমা ইহুদী খ্রিস্টানরা এ বিষয়ে তাদের হোয়াইট সুপ্রিমেসিকেই সমর্থন করছে, শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদে হাজার হাজার জনতা ব্যাপকমাত্রার করোনার মধ্যেই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে নেমেছে। একই সুত্রে মুসলিম বিদ্বেষী স্লোগানও দিচ্ছে। এদিকে ফ্রান্সের মুসলিম ঐক্যও থেমে নেই, নির্যাতন অত্যাচার উপেক্ষা করে তারাও নেমেছে রাজপথে। বিশ্ব মিডিয়ার মূলপাতা জুড়ে ফ্রান্স ইস্যু। টিভিতে প্রতিবেদনের খই ফুটে চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষনের। এর মূলে কী আসলে? এসবই কী পূর্ব পরিকল্পিত? আরেকটি পশ্চিমা কুটচাল? নাকি নিছক ঘটনা দূর্ঘটনার দোলাচল? তবে সত্যি যে এসব এক মহা অশনি সংকেত বা কেয়ামতের আলামত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সম্পাদক / দৈনিক হাকালুকি