• ২৭শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৭শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

টাঙ্গাইলে চরাঞ্চলে বাড়ছে তামাক চাষ, কৃষকদের টানছে কোম্পানির লোভনীয় প্রস্তাব

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
টাঙ্গাইলে চরাঞ্চলে বাড়ছে তামাক চাষ, কৃষকদের টানছে কোম্পানির লোভনীয় প্রস্তাব

গৌরাঙ্গ বিশ্বাস, বিশেষ প্রতিনিধি:

টাঙ্গাইলের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে তামাক চাষ। দেশি-বিদেশি তামাক কোম্পানিগুলো অধিক মুনাফার আশ্বাস দিয়ে এবং অগ্রিম অর্থ সহায়তা দিয়ে স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষে আকৃষ্ট করছে। ফলে ফসলি জমির উর্বরতা হ্রাসের পাশাপাশি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

স্থানীয় কৃষকদের দাবি, তামাক কোম্পানিগুলো বীজ, সার, কীটনাশক, ত্রিপল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করে। চাষ শেষ হলে তারাই নির্ধারিত মূল্যে তামাক কিনে নেয়, ফলে কৃষকদের বাজারজাতকরণের চিন্তা করতে হয় না। ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি, জাপান টোব্যাকো কোম্পানি এবং আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরাসরি কৃষকদের অর্থায়ন ও উপকরণ দিয়ে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে।

কালিহাতী উপজেলার চর হামজানী, কদিম হামজানী, পটল, ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী, চর নিকলা, টাঙ্গাইল সদরের কাকুয়া, হুগড়া, দেলদুয়ারের এলাসিন, নাগরপুরের পাকুটিয়া, ভাদ্রা, আটাপাড়া, মোকনা প্রভৃতি এলাকায় ব্যাপকহারে তামাক চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে ভূঞাপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর ও নাগরপুর উপজেলায় তামাক চাষের বিস্তার সবচেয়ে বেশি।

তামাক চাষি আমির আলী বলেন, “তামাক চাষে অন্য ফসলের চেয়ে দ্বিগুণ লাভ হয়। শরীরের ক্ষতি হলেও আমরা বাধ্য হয়ে তামাক চাষ করছি।”

তামাক চাষি জব্বার মিয়া জানান, “আমি আট বছর ধরে তামাক চাষ করছি। কোম্পানি আমাদের সব ধরনের সহায়তা দেয়, আবার তারাই কিনে নেয়। বাইরের কেউ তামাক কিনতে পারে না।”

পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক চাষে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক মাটির উর্বরতা নষ্ট করে এবং পরিবেশে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। পরিবেশ উন্নয়ন কর্মী সোমনাথ লাহিড়ী বলেন, “তামাক চাষে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদান চাষিদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে ‘কারগিল’ নামক সার ব্যবহারের ফলে চাষিরা নিউরো-টক্সিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।”

ডা. জিল্লুর রহমান বলেন, “দীর্ঘদিন তামাক চাষে যুক্ত থাকলে ক্যানসার, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, চর্মরোগ, বুক ও ঘাড়ের ব্যথাসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে চাষিদের সন্তানদের ‘গ্রিন টোবাকো সিনড্রোম’ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।”

প্রশাসনের নজরদারির অভাব

বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, তামাক চাষের জন্য অনুমতি নিতে হয়। তবে টাঙ্গাইলে অনুমতি ছাড়াই তামাক চাষ হচ্ছে। টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আশেক পারভেজ বলেন, “সরকারি কোনো নির্দেশনা না থাকায় আমরা তামাক চাষের বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করি না।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তামাক চাষ কমাতে কঠোর সরকারি নজরদারি, কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তামাকজাত পণ্যের ওপর বাড়তি কর আরোপ করা জরুরি। অন্যথায় তামাক চাষের এই প্রবণতা দেশের কৃষি, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করতে পারে।