ফোকলোর ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। ফোকলোর বা লোকসংস্কৃতি ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য এই সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হলেন তিনি।
আজ ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এবারে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন ১০ গুণীজন। বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্তর্বতীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার প্রদান করবেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক, নাট্য নির্দেশক ও শিক্ষক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশীয় থিয়েটারের সাথে নৃবিজ্ঞান, জনসংস্কৃতি, রাজনীতি, ফোকলোর ও অন্যান্য জ্ঞানকাণ্ডের অভিন্ন ক্ষেত্রগুলোতে বিচরণশীল একজন তাত্ত্বিক, গবেষক। ড. সৈয়দ জামিলের লেখা Acinpakhi Infinity: Indigenous Theatre of Bangladesh (2000) গ্রন্থটি এদেশের হাজার বছরের পরম্পরাভিত্তিক নাট্য ও পরিবেশনা সংক্রান্ত ক্ষেত্র সমীক্ষাভিত্তিক জ্ঞানের প্রথম উল্লেখযোগ্য প্রামাণিক দলিলরূপে নাট্যকর্মী ও বিদ্বৎমহলে সমাদৃত। লোকসংস্কৃতি নিয়ে তাঁর লেখা এই ‘অচিনপাখি’ বইটি অনন্য এক সংগ্রহ। এছাড়া ফোকলোর নিয়ে গবেষণাধর্মী অনেক লেখা রয়েছে তাঁর।
তাঁর লেখা হাজার বছর: বাংলাদেশের নাটক ও নাট্যকলা (১৯৯৫), In Praise of Niranjan: Islam Theatre and Bangladesh (২০০১), তৃতীয় বিশ্বের বিকল্প নাট্যধারা: উন্নয়ন নাট্য: তত্ত্ব ও প্রয়োগ (২০০১), Reading Against the Orientalist Grain: Performance and Politics Entwined with a Buddhist Strain (2008) এবং Applied Theatricks: Essays in Refusal (2013)প্রভৃতি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে থিয়েটারের ইতিহাস তত্ত্ব ও চর্চার সাথে সমাজ রাজনীতি ও জীবনের নানা দিগন্তের অন্যতর উন্মোচন ঘটায়।
তাঁর লেখা বইগুলোর মধ্যে – Memory of Indigo Rebellion: Retained, Erased, Transmuted, The Hidden Life of Bangladesh Theatre: Teeming and Perpetually in Motion এবং সারাহ কেইন রচিত 4.48 Psychosis নাটকের অনুবাদ ও সৃজন-প্রক্রিয়া বিষয়ক সম্পাদিত সংকলন। এছাড়াও তিনি নাট্যকলা, প্রায়োগিক নাট্যকলা, লোক সংস্কৃতি ও কালচারাল স্টাডিজ বিষয়ের উপর বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় আনুমানিক ৭০টি একাডেমিক প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তাঁর কিছু প্রবন্ধ ফরাসী, নরওয়েজিও, রুশ, চীনা, কোরিও ও হিন্দি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
এছাড়া অসংখ্য নাট্য প্রযোজনা নির্মাণ এবং দেশে বিদেশে তা মঞ্চায়ন করেছেন তিনি। মীর মশাররফ হোসেন রচিত বিষাদ সিন্ধু (১৯৯১ ও ১৯৯২: বাংলাদেশ), আরব্য রজনীর গল্প অবলম্বনে এক হাজার অউর এক থি রাতে (১৯৯৮: পাকিস্তান), মনসামঙ্গল অবলম্বনে বেহুলার ভাসান (২০০৪, ২০০৫ ও ২০১০: বাংলাদেশ), শেকসপিয়ার রচিত ম্যাকবেথ (২০১০: ভারত), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত শ্যামা অবলম্বনে শ্যামার উড়াল (২০১২: ভারত), অভিষেক মজুমদার রচিত রিজওয়ান (২০১৭: বাংলাদেশ),শহীদুল জহির রচিত জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা (২০১৯: বাংলাদেশ) সারাহ কেইন রচিত ৪.৪৮ সাইকোসিস-এর বঙ্গানুবাদ ৪.৪৮ মন্ত্রাস (২০২০: বাংলাদেশ), ডানকান ম্যাকমিলান রচিত এভরি ব্রিলিয়ান্ট থিং-এর বঙ্গানুবাদ বিস্ময়কর সবকিছু (২০২১: বাংলাদেশ) এবং নীলিমা ইব্রাহিম রচিত আমি বীরাঙ্গনা বলছি (২০২৩: বাংলাদেশ)প্রভৃতি প্রযোজনা দেশে-বিদেশে সমাদৃত হয়েছে।
ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান । তিনি নয়া দিল্লী (ভারত)-এ অবস্থিত ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা’ থেকে গ্রাজুয়েশন (১৯৭৮) এবং ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকে) থেকে এমএ ডিগ্রি (১৯৮৯) অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি (১৯৯৭) লাভ করেছেন। ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক(সচিব পদমর্যাদা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।