• ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে পুলিশের হেফাজতে যুবকের মৃত্যু

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত অক্টোবর ১২, ২০২০
সিলেটে পুলিশের হেফাজতে যুবকের মৃত্যু

সিলেটে এক যুবকের মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। যুবকের পরিবারের দাবি, আটকের পর দাবিকৃত টাকা না পেয়ে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
প্রথমে ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করলেও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর ঘটনাটি তদন্ত ছাড়া কিছু বলতে চাচ্ছেন না পুলিশ কর্মকর্তারা। রোববার ভোরে মৃত্যুর এ ঘটনা ঘটে।

নিহত রায়হান আহমদ (৩৪) সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার নেহারিপাড়ার গুলতেরা মঞ্জিলের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি এক সন্তানের জনক। নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেটে ডা. আবদুল গফ্ফারের চেম্বারে তিনি চাকরি করতেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

এদিকে ‘পুলিশি নির্যাতনে’ রায়হানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় লোকজন রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় আধাঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর পুলিশ গিয়ে তাদের শান্ত করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্তের আশ্বাস দেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

রায়হানের মা সালমা বেগম ও চাচা হাবিবুল্লাহ অভিযোগ করে যুগান্তরকে জানান, কর্মস্থল চিকিৎসকের চেম্বার থেকে ফিরতে দেরি দেখে শনিবার রাত ১০টায় রায়হানের মোবাইলে ফোন দেন মা ও স্ত্রী। কিন্তু ফোন বন্ধ পান। ভোর ৪টা ২৩ মিনিটের দিকে মায়ের মোবাইল ফোনে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে কল দিয়ে রায়হান জানায় পুলিশ তাকে ধরে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নিয়ে এসেছে। এখন তার কাছে ১০ হাজার টাকা ঘুষ চাচ্ছে। টাকা দিলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেবে। এ সময় কেঁদে কেঁদে রায়হান তাকে বাঁচানোর আকুতি জানায়।

অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, ওই মোবাইল নম্বরটি বন্দর ফাঁড়ির কনস্টেবল তৌহিদের। এদিকে ছেলেকে পুলিশে ধরেছে শুনে রায়হানের মা তার চাচাকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পাঠান। রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ রোববার ফজরের সময় টাকা নিয়ে ভাতিজা রায়হানকে ছাড়িয়ে আনতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যান।

এ সময় সাদা পোশাকে ফাঁড়িতে থাকা এক পুলিশ সদস্য হাবিবুল্লাহকে বলেন, আপনার ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা। আপনি ৫ হাজার টাকা নিয়ে আসলেন কেন? চলে যান, রায়হান এখন ঘুমাচ্ছে এবং যে পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ধরে নিয়ে এসেছেন তিনিও ফাঁড়িতে নেই। আপনি ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল ৯টার দিকে আসেন। আসলেই তাকে নিয়ে যেতে পারবেন। তাকে আমরা কোর্টে চালান করব না।

রায়হানের চাচা বাসায় চলে যান এবং পরে সকাল পৌনে ১০টায় দিকে টাকা নিয়ে ফের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যান। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তার চাচাকে জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ায় সকাল ৭টার দিকে রায়হানকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এ খবরে হাবিবুল্লাহ উদ্বিগ্ন হয়ে তৎক্ষণাৎ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন রায়হানের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিকাল ৩টার দিকে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। রায়হানের লাশ দাফন করে তিন পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন বলে জানান চাচা হাবিবুল্লাহ।

রোববার ভোরে রায়হানের মৃত্যুর পর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল ছিনতাইকালে নগরীর কাস্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।

রায়হানকে আটককারী বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আশিক এলাহীর কাছে জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, রায়হানকে কখন কোথা থেকে আটক করা হয়েছিল তা মিডিয়াকে জানানো হয়েছে। তিনি কিছু বলতে পারবেন না।

রোববার দুপুরে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ছিনতাই চেষ্টাকালে রায়হান গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

তবে পরিবারের পক্ষ থেকে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ তোলার পর বক্তব্য পাল্টে যায় পুলিশের।

রোববার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার যুগান্তরকে বলেন, মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখের নেতৃত্বে বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হলে কিছু বলা যাবে না।

ওসমানী হাসপাতাল সূত্র জানায়, রোববার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে রায়হানকে সেখানে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭টা ৫০ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

নিহতের মামাতো ভাই আবদুর রহমান অভিযোগ করেন, গণপিটুনিতে মারা গেলে তার দেহের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন থাকত। কিন্তু তার হাতের নখগুলো দেখলে অনুমান করা যায় তা উপড়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। পায়ের হাঁটুর নিচে রড দিয়ে পেটানো হয়েছে। পুলিশ ফাঁড়িতে তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন আবদুর রহমান। সুত্র: যুগান্তর।

January 2025
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031